বাগেরহাটে গ্রাহকের দেড় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর যাত্রাপুর বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান হাদী। খবর পেয়ে রবিবার দুপুর থেকে গ্রাহকরা সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজারস্থ এই ব্যাংকের কার্যালয়ে ভীড় করেন। অনলাইনে নিজের হিসেবে টাকা দেখতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। এজেন্ট ব্যাংকিং ইনচার্জ ও অন্যান্য কর্মচারীদের কাছে নিজেদের জমা রাখা টাকা দাবি করেন গ্রাহকরা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে প্রতারক উদ্যোক্তার নামে সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে, আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
গ্রাহকদের দাবি, ইসলামী ব্যাংকের সুনাম থাকায় তারা এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে টাকা ফিক্সডিপোজিট করেছিলেন। ব্যাংক থেকে জমা রশিদও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান হাদি এই টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। হাদিউজ্জামানকে আটক করে টাকা আদায় করার দাবি জানান তারা।
সাবানা বেগম নামের এক নারী গ্রাহক বলেন, সাড়ে চার লক্ষ টাকা রেখেছিলাম ব্যাংকে। এই টাকার লাভে আমার সংসারের অনেক খরচ চলত। কিন্তু ব্যাংকে এসে জানলাম আমার হিসেবে কোন টাকা জমা নেই। আমাদের কোন আয় নেই, স্বামী পঙ্গু হাঁটতে পারেন না। এখন আমাদের কিভাবে চলবে।
যাত্রাপুর এলাকার মনোয়ারা বেগম নামের আরেক নারী উদ্যোক্তা বলেন, চাচা, ফুফু ও আমার মিলে ২৩ লক্ষ টাকা আছে এই ব্যাংকে। হিসেবে দেখছি কোন টাকা নেই। এত টাকা হারিয়ে পরিবারের সবাই এখন খুবই চিন্তিত। কি হবে জানি না।
বাগদিয়া এলাকার আজিজুল হক নামের এক কৃষক বলেন, ৫০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এখন শুনছি টাকা নেই। এভাবে হলে কিভাবে আমরা টাকা পয়সা সঞ্চয় করব।
চাপাতলা এলাকার মিনারা বেগম নামের এক গ্রাহক বলেন, ১ লক্ষ ১০ টাকা রেখেছিলাম। কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। এভাবে আমাদের টাকা উদ্যোক্তা আত্মসাৎ করছেন। এ বিষয়টি ব্যাংকের ইনচার্জ বা ক্যাশিয়ার কখনও আমাদের জানাননি। এটা আমাদের সাথে প্রতারণার শামিল।
এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, এই শাখা ৫ বছর ধরে চলছে। তানিশা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাদিউজ্জামান হাদি এই আউটলেট নেন। আমাদের ২ হাজার ৬শ’-এর মত গ্রাহক রয়েছে। যাদের ডিপোজিটের পরিমাণ ৬ কোটি টাকার উপরে। এসব গ্রাহকের জমা দেওয়া টাকা আমরা নিয়ম-অনুযায়ী ব্যাংকে জমা দিয়েছি। কিন্তু কিছু সংখ্যক গ্রাহকের টাকা ব্যাংকের উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান হাদী নিজে নিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করেছেন। এই টাকার বিপরীতে উদ্যোক্তা নিজে এবং আমাদের দিয়ে গ্রাহকদের ব্যাংকের স্লিপ দিয়েছেন। উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামানের নেওয়া গ্রাহকদের টাকার পরিমাণ দেড় কোটির মত হতে পারে।
মোঃ আব্দুল হালিম আরও বলেন, হাদিউজ্জামান প্রায় দুই মাস ধরে ব্যাংকে আসেন না। গ্রাহকরা টাকা নিতে আসলে অন্য গ্রাহকদের টাকা দিয়ে সমন্বয় করতে বলেন। আমরা সেভাবেই করেছি। সবশেষ কয়েকদিন আগে অনেক চেষ্টা করে তার সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাদেরকে বলেছেন যত দ্রুত সম্ভব জমি বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করে দিবেন।
এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ইনচার্জ আরও বলেন, কিছু গ্রাহক আছেন যারা অতিরিক্ত লাভের আশায় ব্যাংকে টাকা না রেখে উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামানের সাথে চুক্তি করে টাকা রেখেছেন। লাভও নিয়েছেন। এসব গ্রাহকের বিষয়ে আমরা ঠিকঠাক জানি না। এখন লাপাত্তার খবর শুনে তারা এসেছেন।
এদিকে হাদিউজ্জামান হাদি ও তার পরিবারের লোকজন কয়েকদিন ধরে এলাকা ছাড়া রয়েছেন। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ বাগেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক এ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ তরিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমরা বাগেরহাট মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছি। উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরও বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে ফিংগার প্রিন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন করতে হয়। এ বিষয়টি ব্যাংক উদ্বোধনের সময় আমরা বলেছি। এছাড়া বিভিন্ন সময় পরিদর্শনে গিয়ে ব্যাংক অফিসাররা গ্রাহকদের জানিয়েছেন। তারপরও উদ্যোক্তা প্রতারণার মাধ্যমে জমা স্লিপ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্যোক্তাদের ব্যাংকের স্লিপ ব্যবহার করার কোন নিয়ম নেই। গ্রাহকদেরও মধ্যেও কেউ কেউ অতিরিক্ত লাভের আশায় তাকে টাকা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের এই ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন তিনি।
সুত্র skhobor
Leave a Reply