মো.দিল,সিরাজগঞ্জ :
ঈদকে সামনে রেখে আবারো কর্মমুখর সিরাজগঞ্জের তাঁতকুঞ্জ। ভোর থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত তাঁত বুননের খট খট শব্দে মুখোরিত এখন সিরাজগঞ্জ জেলার প্রতিটি তাঁত পল্লী।
জেলার সদর, বেলকুচি ও শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া সহ উপজেলার প্রতিটি তাঁত পল্লীতে তৈরি হচ্ছে বাহারি নাম আর নতুন নতুন ডিজাইনের আধুনিক মানের জামদানি, সুতি জামদানি, সুতি কাতান, বেনারসি ও বিভিন্ন ধরনের লুঙ্গি এছাড়া আরো রয়েছে বেনারশি, সিল্ক, রেশমী, কটন, জামদানি ও কাতান শাড়িতে নিপুন হাতে আধুনিক ও শৈল্পিক কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বাহারি নকশা।
কাপড়ের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দামও বেড়েছে অনেক। দাম বেশি হলেও চাহিদার কোনো কমতি না থাকায় বেজায় খুশি তাঁত মালিক, শ্রমিকসহ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। জেলার তাঁত প্রধান এলাকা হিসেবে খ্যাত বেলকুচির শেরনগর, চন্দনগাঁতী বসুন্ধারা,
তামাই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তাঁতিরা কাপড় বুনছেন আপন মনে। কেউ কেউ আবার কাজের ফাঁকে ফাঁকে গানও গাচ্ছেন। তাঁত মালিকরা ব্যস্ত পাইকারদের নিয়ে। একই সঙ্গে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারী শ্রমিকরাও নলীভরা, সুতাপারি করা, মাড়দেয়া ও রংতুলিতে নকশা আঁকাসহ কাপড় বুননের কাজেও সহযোগিতা করছেন।
এদিকে, বিবিয়ানা, রং, কে-ক্রাফট ও নগরদোলাসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় বুটিক প্রতিষ্ঠানের কাপড় এখন বেলকুচি অঞ্চলে তৈরি হয়। বুটিক হাউসগুলোর নিজস্ব ডিজাইনে রেশম সুতা, খাদি, নয়েল,
ডুপিয়ান ও অ্যান্ডি সুতা ব্যবহার করে তাতে প্যালেস ও জরি মিশ্রিত করে কাপড় তৈরি করা হচ্ছে। বুটিক হাউসের ওড়না, থান কাপড় ও অ্যান্ডি থান কাপড়ের ফেব্রিক্স তৈরি করা হচ্ছে এখানে। এ দিয়ে নানা ধরনের পোশাক তৈরি করছে বুটিক হাউসগুলো।
তরুণ-তরুণীদের কথা মাথায় রেখে তাঁতিরা উন্নতমানের জামদানি নকশা, শেড ও থান কাপড় তৈরি করছে। এ দিয়ে পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ আর ফতুয়া তৈরি হচ্ছে। জামদানি থ্রি-পিস দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা এবং চেক থ্রি-পিস ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে, ঈদকে সামনে রেখে ভারতের বাজারের সঙ্গে টক্কর দিতে ক্রেতাদের নজর কাড়তে ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সিরিয়ালের নাম অনুযায়ী কাপড়ের নাম রাখা হচ্ছে। কাপড়গুলো হাফ সিল্কের ওপর ঝুটের মনোমুগ্ধকর নকশা করা।
ইতোমধ্যেই এ শাড়ি ক্রেতাদের মন কেড়েছে। বাজারে এর দাম দুই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মনিহার টেক্সটাইলের মালিক বলেন বর্তমানে কাপড়ের চাহিদা ভাল সামনে ঈদ হিমশিম খেতে হচ্ছে কাপড় তৈরিতে।
রুচিশীল ক্রেতাদের বিষয়টি খেয়াল রেখেই ভারত থেকে জুট এনে তা দিয়ে হাতে বিভিন্ন নকশা করে শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাজারে এ শাড়ির চাহিদা আকাশছোঁয়া। পাইকাররা অগ্রিম টাকা দিচ্ছে এ শাড়ির জন্য। চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাঁতিরা দিনরাত এক করে এ কাপড় তৈরি করে যাচ্ছেন।
ঈদের মৌসুম আসলেই প্রতি বছর তাঁতপল্লীতে কাজের চাপ বেড়ে য়ায় দ্বিগুণ, রাতদিন দম ফেলার সময় থাকে না শ্রমিকদের। আর তাই ঈদকে সামনে রেখে ভোর থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত কাজ করে তাঁতিরা জেলার তাঁত পল্লীগুলো আবারো কর্মমুখর হয়ে ওঠায় খুশি তাঁত শ্রমিকরা।
তাঁত মালিকরা বলছে দুই বছর ধরে করোনার প্রভাব না থাকায় আবারো তাঁতের কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে
তবে ক্রমাগত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়া রং ও সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আবারো ঘুরে দাড়াবে জেলার ঐতিয্যবাহী এই তাঁত শিল্প।
তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে অনিয়ন্ত্রিত রং ও সুতার বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং এর পাশাপাশি সরকারি ভাবে পৃষ্ঠপোষকতার দাবী জানান তাঁত মালিকরা আর জেলায় পাওয়ারলুম ও হ্যান্ডলুম রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। আর এই শিল্পে সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত প্রায় ১০ লাখ মানুষ।
Leave a Reply