বাংলাদেশ ও ভারতের পাসপোর্ট-যাত্রীদের নিরাপদভাবে যাতায়াত লক্ষ্যে এখানে রয়েছে দেশের প্রায় সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এসব আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া ও রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনে প্রধান দায়িত্বে রয়েছেন এসবিআই পুলিশ সদস্য। এছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে রয়েছে ডিজিএফআই, এনএসআই , এফএস, এসপিবিএন সদস্য সহ দেশের অধিকাংশ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণিক দায়িত্বে রয়েছেন এসব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তারপরেও এসব সদস্যদের সামনেই চলছে আনসার সদস্যদের পাসপোর্ট যাত্রীদের জিম্মি প্রথা।
সোমবার সকালে সরজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, বেনাপোল বন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে থেকে সাদিপুর রাস্তার ব্রিজ পর্যন্ত ভারত যাত্রার অন্তত ২৫শ’ থেকে ৩ হাজার যাত্রীর লম্বা লাইন। এ লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে রয়েছেন গুরুতর ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীসহ সাধারণ ভ্রমণ যাত্রীরা। আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের ভিতর প্রবেশে আগে আসলে আগে যাবেন এ প্রথা চালু থাকলেও এসব আনসার সদস্যরা তা মানছে না। এসব আনসার সদস্যরা ১০০০ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পিছনের লোকজনকে ইমিগ্রেশনের ভিতরে আগে নিয়ে সিরিয়াল দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে লাইনের আগে অবস্থান করা লোকজন প্রতিবাদ করলে তাদেরকেও করা হচ্ছে নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন।
এর ফলে অধিকাংশ যাত্রীরা একপ্রকার জিম্মি হয়েই এসব আনসার সদস্যদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে তারা ইমিগ্রেশনের ভিতরে সিরিয়াল নিচ্ছেন। যারা আনসার সদস্যদের চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে না পারছে তাদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা তীব্র গরমে বাইরে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
ভারত গমন পাসপোর্ট যাত্রী, রমেন দাস, শ্রীকান্ত বিশ্বাস, বিজয় কুমার রাহা, নজরুল ইসলাম, আব্দুর রহিম, লিয়াকত হোসেন, আব্দুল জব্বার, আব্দুল মালেকসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, সোমবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা থেকে বাসে করে বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। ছয়টার দিকে ইমিগ্রেশন খোলার পরে দেখা যায় পূর্ব পাশের গেট দিয়ে আনসার সদস্যদেরকে টাকা দিয়ে তারা আগে ইমিগ্রেশনের কার্যাবলী সম্পাদন করে ভারতে প্রবেশ করছেন। অথচ আমরা যারা সাধারণ যাত্রী ইমিগ্রেশন প্যাসেঞ্জার সামনে চার ঘন্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের লাইন যেন আর শেষ হয় না। পরে দালালদের মাধ্যমে জানতে পারলাম ১৫শ টাকা দিলে আগে লাইনে ঢোকা যাবে এবং ইমিগ্রেশনের কার্যাবলী সম্পাদন করে ভারতে প্রবেশ করা যাবে। কিন্তু আমাদের পক্ষে এত টাকা দেয়া সম্ভব নয় বলে জানায়। অথচ আমাদের পিছন থেকে অনেক পাসপোর্ট-যাত্রী দালালদের সঙ্গে আঘাত করে আনসার সদস্যদেরকে দাবিকৃত টাকা দিয়ে আমাদের আগেই বেনাপোলের ইমিগ্রেশনের কার্যাবলী সম্পাদন করে তারা ভারতে প্রবেশ করছেন। অথচ আমরা সিরিয়ালের বা লাইনের প্রথমে থেকেও আমরা ইমিগ্রেশনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারছি না। এটি খুব দুঃখজনক ও হতাশার। তারা আরো জানায় এখানে কোন কিছুই সিস্টেমে চলে না সবকিছু অ্যারেঞ্জ মানেজের মাধ্যমে চলছে। আমরা প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের উপর চড়াও হয় ও নানাভাবে হয়রানি করে।
স্থানীয় বিশেষ সূত্রগুলো বলছে, বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন কেন্দ্রিক সংঘবদ্ধ দালাল ও পাসপোর্ট যাত্রীদের মালামাল বহনের জন্য দায়িত্বে থাকা কুলি এদের সাথে আনসার সদস্যদের সঙ্গে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। এসব দালাল ও কুলিদের মাধ্যমে আনসার সদস্যরা পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে এসব টাকা সংগ্রহ করে থাকে। এসব দালালদের শরণাপন্ন না হলে ওইসব পাসপোর্ট যাত্রীদের ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রখর রৌদ্রে লম্বা লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর আনসার ও দালাল সদস্যদের শরণাপন্ন হয়ে চাহিদা মোতাবেক টাকা দিলে দ্রুত পেসেঞ্জার টার্মিনাল দিয়ে ইমিগ্রেশনের ভিতরে প্রবেশ করে দ্রুত ইমিগ্রেশনের কার্যাবলী সম্পাদন করে ভারতে প্রবেশ করা যায়।
বিষয়টি নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালিত আনসার কমান্ডার কাকন কুমার মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগের কারণে আমি প্রতিনিয়ত আনসার সদস্যদের চেঞ্জ করে থাকি। তারপরও আমার কোন সদস্যরা এধরনের অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
সুত্র novanews24
Leave a Reply