কারিগরি শাখার শিক্ষার্থীকে পেটালেন বাঘারপাড়ার শ্রেষ্ট শিক্ষক

স্টাফ রিপোর্টার :

যশোরের বাঘারপাড়ায় ধান কাটার জন্য স্কুল কামাই, এই অপরাধে কারিগরি শাখার পার্থ বিশ্বাস নামের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বেদম মারপিটের শিকার হয়েছেন। উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার ট্রেড ইন্সট্রাক্টর বিশ্বজিৎ পালের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী পার্থ বিশ্বাস করেছেন নড়াইল সদর থানার হাতিয়াড়া গ্রামের কৃষ্ণ পদ বিশ্বাসের ছেলে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে ম্যানেজিং কমিটির প্রত্যেক সদস্যের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি এ গরীব অভিভাবক।
জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে বাবার সঙ্গে কয়েকদিন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ছিলেন শিক্ষার্থী পার্থ বিশ্বাস। এরজন্য ৫দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। ধানকাটা শেষ হলে বাবা কৃষ্ণপদ ছেলেকে নিয়ে বিদ্যালয়ে যান এবং কারিগরি শাখার সকল স্যারকে বিনয়ের সাথে ছেলের স্কুলের অনুপস্থিতির বিষয়টি জানান।

এবং ছেলেকে কোনো স্যার যেন তিরস্কার বা মারপিঠ না করেন তাও বলে আসেন অভিভাবক। এরপরও গত ১৬মে ট্রেড ইন্সট্রাক্টর বিশ্বজিৎ কুমার পাল শ্রেণি কক্ষে লাঠি দিয়ে ১৫ থেকে ১৬টি আঘাত করেন। এতে তার সমস্ত শরীরে রক্তের কালো দাগ পড়ে যায়। এরপর স্থানীয় চিৎিসকের কাছে চিকিৎসা নেন শিক্ষার্থীকে। আরও জানা গেছে, এবছর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে বিশ্বজিৎ পাল শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছেন। এ উপলক্ষে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে এই শিক্ষককে।

শিক্ষার্থীর বাবা কৃষ্ণ পদ বিশ্বাস জানান,‘আমি গরীব কৃষক। এবার ধানকাটা শ্রমিকের দাম অনেক বেশী হওয়ায় ছেলেসহ পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ধান কাটতে হয়েছে। প্রচন্ড রোদে ধান কাটার সময়ে ছেলের হাতে ফোঁসকা পড়ে এবং ফোঁসকাগুলো ফেটে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। নিজ হাতে পার্থ ভাত খেতে পারে না। তার মা তাকে ভাত খাইয়ে দেয়। সেদিন স্কুলে গেলে শ্রেণি শিক্ষক বিশ্বজিৎ পাল ছেলেকে দাড় করান এবং উপবৃত্তির তালিকা বাবদ ৫০ টাকা নেন। এরপর কেনো স্কুল কামাই হলো জানতে চেয়ে হাত (বেত মারার জন্য) পাততে বলেন সেই বিশ্বজিৎ স্যার। ছেলে তখন বলে আমার হাতে ব্যাথা। এরপরই বিশ্বজিত পাল শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেদধড়ক মারপিট শুরু করেন।

বাড়িতে গেলে কাউকে কিছু না বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে পার্থ। রাতে শরীরে জ্বর আসলে সেদিনের মারপিটের ঘটনা খুলে বলে বাবা মাকে। এসময় জামা-প্যান্ট খুলে ছেলেটির শরীরে অসংখ্যা আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। পরের দিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের জানাই। ঘটনার এক সপ্তাহ চলে গেলেও তারা কেউই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আবার বিশ্বজিৎ পাল আমাকে হুমকী দিচ্ছে, আমাকে দেখে নেবে এবং আমার ছেলেকে ফেল করায়ে দেবে। এমনকি কোনো অফিসে অভিযোগ দিলেও ছেলের ক্ষতি হবে বলে লোক মারফত জানিয়ে দিয়েছেন বিশ্বজিৎ বাবু।

মারপিটেরঅভিযোগ স্বীকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, যারাই স্কুল কামাই করেছিলো সবাইকে ঐদিন দুই তিনটা মার দেওয়া হয়েছে। যেহেতু পার্থ উপবৃত্তি পায় তাই বেশী দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে ওর ক্ষতি হবে’।
বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি বিশ্বাস বলেন,‘ শিক্ষার্থীর বাবা মৌখিক অভিযোগ দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে এমনটি আর ঘটবে না এমন কথা সে সময় অভিভাবককে জানিয়ে দিয়েছিলাম’।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খান বলেন,‘ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন অনুযায়ি শিক্ষার্থীদের মারপিট করা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। অভিভাবক লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। অভিযোগ প্রমানিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষক বহিষ্কার হতে পারেন। তিনি আরও বলেন, উপজেলার একমাত্র আবেদনকারী হওয়ায় বিশ্বজিৎ পাল কারিগরি শাখায় শ্রেষ্ট শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন’।