আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন দরকার এর গুণগত মান বাড়ানো, যা শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করবে। বাজার থেকে যেসব খাবার ফলমূল ও সবজি কেনা হয় বেশির ভাগের মধ্যেই বিভিন্ন কৃত্রিম সার, রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত থাকে৷ এর ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের সবার উপর পড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কৃত্রিম সার, রাসায়নিক দ্রব্য, ফরমালিন ইত্যাদির যথেচ্ছ ব্যবহারে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, লিভারের ক্ষতি সাধনসহ নানাবিধ রোগব্যাধির প্রকোপ মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ বিশেষভাবে শিশুদের ওপর এর প্রভাব বেশ প্রবল৷ শিশুদের খাবার-দাবারের সাথে তাদের বিভিন্ন আচরণগত পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে৷
তাই অরগ্যানিক (কৃত্রিম সার ও রাসায়নিক মুক্ত) খাবার ও শাক-সবজি আমাদের নিজেদের জন্য তো দরকারই, শিশুদের জন্য এর প্রয়োজন আরও বেশি৷
কৃষিতে জৈব চাষের ধারণা নতুন নয়। তবে এটা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
কারণ ষাটের দশকে “সবুজ বিপ্লবের” নামে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর জন্য অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার আমাদের চারপাশের পরিবেশকে বিষাক্ত করার পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্যকেও বিপন্ন করে তুলেছে।
ক্রমাগত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমি তার উর্বরতা হারিয়েছে। বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। তাই এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে। জৈব চাষ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
ডাব্লুএইচও (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) -এর মতে, সুস্থ স্বাস্থ্যের অধিকারী একজন মানুষকে প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম শাকসবজি এবং ফল খাওয়া দরকার যেখানে সবুজ পাতা, বাদাম এবং সবুজ ফল অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি (এনএফএনএসপি) বাংলাদেশ সরকার (জিওবি) দ্বারা ২০২০ সালের আগস্টে অনুমোদিত হয়েছিল এবং এর লক্ষ্য হল দেশ যাতে তার খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা-সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করে । ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য কৃষি কাজে অব্যবহৃত জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই নীতি হল যে কোন মূল্যে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং উন্নত পুষ্টি অর্জনের জন্য স্বাস্থ্যকর ও বৈচিত্র্যময় খাদ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি করা।
প্রাথমিক স্তরের শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতি বিবেচনা করলে পরিস্থিতি তেমন স্বাস্থ্যকর নয়। কিন্তু প্রাথমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুষ্টি উৎপাদন কার্যক্রম বাস্তবায়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব মাঠ রয়েছে। এই মাঠ খেলাধূলার কাজে ব্যবহারের পরেও অনেক জমি অব্যবহৃত থেকে যায়।
স্থানীয় প্রশাসন কৃষি বিভাগের সহায়তায় প্রাথমিক সেক্টরের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাষাবাদ শেখার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। কৃষি ক্যালেণ্ডার অনুসারে কৃষি বিভাগ তাদের শেখাতে পারে কিভাবে তারা তাদের স্কুলের আঙিনায় পুষ্টিবাগান করতে পারে।
এই পাঠটি কেবল তাদের শাকসবজি এবং ফল ফলাতেই সাহায্য করবে না, তারা সঠিক পুষ্টির সাথে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করতেও সক্ষম হবে।
তাদের টিফিনের সময়কালে বাচ্চারা সবুজ শাকসবজি বা ফল সংগ্রহ করতে এবং অতিরিক্ত পুষ্টি পাওয়ার জন্য তাদের মধ্যাহ্নভোজের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করতে অনুপ্রাণিত হতে পারে।
শিশুরা যে কোনো স্তরে জ্ঞান অর্জনের জন্য খুবই সংবেদনশীল।
আমরা যদি তাদের মধ্যে পুষ্টি সংবেদনশীল খাদ্য ব্যবস্থা এভাবে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে তারা অদূর ভবিষ্যতে কৃষি খাতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। আজকের শিশুরাই হবে আগামী দিনের স্মার্ট সিটিজেন তাদের মাধ্যমেই গড়ে উঠবে স্মার্ট সোসাইটি। আর তাদের হাত ধরেই নির্মিত স্মার্ট বাংলাদেশ।
Leave a Reply