অস্ট্রেলিয়ার পাহাড় টপকাতে হলে ভারতকে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হতো। চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে এই পাহাড়ি পথ ধরেই হাঁটছিল রোহিত শর্মার দল! বিশেষ করে বিরাট কোহলি-আজিঙ্কা রাহানে জুটিতে ভারতের আশার পালে হাওয়া লেগেছিল। তবে দিন শেষে রাতের বিরতিতেই যেন ভারতের ঘরে লুট-পাট! পঞ্চম দিনে নতুন করে শুরু করার সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার। তাতে পথ হারিয়েছে দলও। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে দিন শুরু করা ভারতের ইনিংস টিকলো আজ মাত্র দুই ঘন্টা! ফলে টানা দুইবার সাদা পোশাকে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও তা আর ছোঁয়া হলো না ভারতের।
অন্যদিকে প্রথমবার ফাইনাল খেলতে নেমেই শিরোপার দেখা পেল অস্ট্রেলিয়া। টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হয়ে নতুন একটা রেকর্ডও গড়েছে অজিরা। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম এবং একমাত্র দল হিসেবে তিন সংস্করণের ক্রিকেটে একই সময়ে চ্যাম্পিয়নের স্বাদ পেল তারা।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নিরপেক্ষ ভেন্যু ইংল্যান্ডের দ্য ওভালে টস হেরে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৬৯ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ২৯৬ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত। ফলে ১৭৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেখানে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে অজিরা। ৪৪৪ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় স্কোরবোর্ডে ২৩৪ রান তুলে অলআউট হয় ভারত। এরফলে ২০৯ রানের জয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরলো অজিরা।
৩ উইকেটে ১৬৪ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেছিল ভারত। দুই দলই তখনও ম্যাচে থাকলেও শেষদিনে শুরু থেকেই দাপট ছিল অজি পেসারদের। স্কট বোল্যান্ডের করা প্রথম ওভারেই ছিল সেটার আভাস। মেইডেন ওভারে শুরু করা এই পেসারের তাপেই শেষ পর্যন্ত পুড়েছে ভারত!
দিনের প্রথম বাউন্ডারি পেতে ভারতকে অপেক্ষা করতে হয় ২৩ বল! অন্যদিকে দিনের প্রথম সাফল্য পেতে অজিদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩৮ বল। বোল্যান্ডের করা ৪৭তম ওভারের তৃতীয় বলটি ফুল লেন্থে ছিল, সেখানে ড্রাইভ করতে গিয়ে ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি কোহলি। এজ হয়ে বল চলে যায় দ্বিতীয় স্লিপে। সেখানে খানিকটা ডানদিকে লাফিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেনে স্টিভেন স্মিথ। এক বল পর রবীন্দ্র জাদেজাকেও সাজঘরে ফেরান এই পেসার। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ডাক খেয়ে ফেরেন এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
এরপর শ্রীকর ভরতকে সঙ্গে নিয়ে সেই বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন রাহানে। কিন্তু অজি বোলারদের তোপে মুখে খুব একটা পথ হাঁটতে পারলেন তিনি। মিচেল স্টার্কের গুড লেন্থ ডেলিভারিতে ঠিকমতো খেলতে পারেননি। বল তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে ক্যারির গ্লাভসে।
রাহানের বিদায়ের পর ভারতের একমাত্র আশা ছিল ভরত। কিন্তু ভরতও রক্ষা করতে পারলেন না ভারতকে। এই উইকেটকিপার ব্যাটার ৪১ বলে ২৩ রান করে সাজঘরে ফিরলে ভারতের হারটা ছিল সময়ের ব্যাপারমাত্র। খুব একটা সময় অবশ্য দেয়নিও অজিরা! শেষদিনের সকালে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে ভারতকে গুটিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া।
দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট করে শিকার করেছেন নাথান লায়ন এবং স্কট বোল্যান্ড। তাছাড়া ৪টি করে উইকেট পেয়েছেন মিচেল স্টার্ক এবং প্যাট কামিন্স। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফাইনাল সেরার পুরস্কার জিতেছেন ট্রাভিস হেড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৪৬৯, ভারত ১ম ইনিংস: ২৯৬,অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (৮৪.৩ ওভারে ২৭০/৮ ডিক্লে.) (ল্যাবুশেন ৪১, গ্রিন ২৫ ক্যারি ৬৬*, স্টার্ক ৪১, কামিন্স ৫; শামি ১৬.৩-৬-৩৯-২, সিরাজ ২০-২-৮০-১, শার্দুল ৮-১-২১-০, উমেশ ১৭-১-৫৪-২, জাদেজা ২৩-৪-৫৮-৩)
ভারত ২য় ইনিংস: ২৩৪ (রোহিত ৪৩, গিল ১৮, পুজারা ২৭, কোহলি ৪৯, রাহানে ৪৬, জাদেজা ০, ভরত ২৩, শার্দুল ০, উমেশ যাদব ০, শামি ১৩, সিরাজ ১; কামিন্স ১৩-১-৫৫-১, বোলান্ড ১৬-২-৪৬-৩, স্টার্ক ১৪-১-৭৭-২, গ্রিন ৫-০-১৩-০, লায়ন ১৫.৩-২-৪১-৪)
ফলাফল- অস্ট্রেলিয়া ২০৯ রানে জয়ী।
অনলাইন ডেস্ক
Leave a Reply