সোমবার (২৬ জুন) যশোর পৌর এলাকায় টিসিবির ডিলার পয়েন্টগুলোতে সরকারের সাশ্রয় মূল্যের পণ্য সয়াবিন তেল ও মসুরীর ডাল বিক্রি করা হয়েছে। এর আগের দিন রোববার শহরে মাইকিং করে জানানো হয়- সোমবার টিসিবির ডিলার পয়েন্টগুলোতে সরকারের সাশ্রয় মূল্যের ডাল ও তেল ফ্যামিলি কার্ডধারী কিনতে পারেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা দরজায় কড়া নাড়ছে। আর মাত্র ৩দিন পরই ঈদ। এ হিসেবে ঈদের আগে আজ (সোমবার) টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হলো।
সীমিত আয়ের মানুষের জন্য সরকার ভর্তকি দিয়ে টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয় মূল্যে সয়াবিল তেল, মসুরীর ডাল, চিনি ও পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য বিক্রি করে আসছে। এরফলে গরীব ও সীমিত আয়ের মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
কিন্তু ঈদের আগেই যশোরে শহরে টিসিবির পণ্য নিয়ে নয়-ছয় ঘটনা ঘটলো। দুপুর ২টার দিকে যশোর ইনস্টিটিউটে টিসিবির ডিলার পয়েন্টে দেখা যায় উপকারভোগী নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। উপকারভোগীরা জানান-এবার টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডে উপকারভোগীরা কিনতে পেরেছেন ২ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ও ২ কেজি মসুরীর ডাল।
ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে যখন দেখা নারী-পুরুষের ভিড় ঠিক তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক খবর পান পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডে (শংকরপুর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিসিবির পণ্য নেই। নেই ডিলার ও তার লোকজন। দ্রুত পৌঁছে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক একই চিত্র দেখতে পান। কেন্দ্রটিতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ কার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। পানির ট্যাঙ্কি এলাকার উপকারভোগী রানু বেগম জানান-বিকেল ৫টা পর্যন্ত টিসিবির পণ্য বিক্রির ঘোষণা রয়েছে কিন্তু এখন দুপুর আড়াইটা বাজে কিন্তু এর ঘন্টাখানেক আগে ডিলারের লোকজন পিকআপে টিসিবির তেল-ডাল নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন-ঈদের আগে এধরণের দুর্নীতি মেনে নেয়া যায় না।
রিকাশাচালক আবিদুর রহমান জানান-সকালে রিকশা নিয়ে বেরিয়েছি। কিছু রোজগার করে টিসিবির পণ্য কিনতে আসলাম কিন্তু কপালে জুটলো না। আলিম নামে এক কিশোর অভিযোগ করেন তিনি দুপুর পৌনে ২টার দিকে এসে দেখতে পান কেন্দ্রের দরজা খোলা রয়েছে। দরজার সামনে কিছু মসুরীর ডাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে কিন্তু ডিলার ও তার লোকজন নেই। স্থানীয়রা তাকে জানিয়েছে-দেড়টার আগেই ডিলারের লোকজন সব ক্লোজ করে চলে গেছে।
এ সময় ছুটে আসতে দেখা যায় এক ব্যক্তিকে। তাকে বিরক্তিরসুরে বলতে শোনা যায়-ডিলারের লোকজন একি করে গেছে। কোনো দরজা বন্ধ করেনি, কিছু না জানিয়েই চলে গেল। এ সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি বলেন নাম শিমুল। আমি এই স্কুলের দপ্তর। তিনি বলেন-ওরা কখন চলে গেছে তা জানি না। তিনি ডিলারের কেউ না-বলেন শিমুল।
দুপুর ১.৪০ মিনিটে কেন্দ্রে টিসিবির পণ্য কিনতে যান সাংবাদিক সুনীল ঘোষ। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে বলেন-বিকেল ৫টা পর্যন্ত টিসিবির পণ্য বিক্রির নিয়ম রয়েছে কিন্তু এখানে ১.৩৫ মিনিটে পৌঁছে দেখি ডিলার ও তার লোকজন চলে গেছে। দরজার সামনে কিছু মসুরীর ডাল ও কিছু পলিথিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত ঘটনার তদন্ত দাবি করেন। তার ফ্যামিলি কার্ড নম্বর-৭১৩০৮।
তাৎক্ষণিক টিসিবির ডিলার এসোসিয়েশনের নেতা মাফুজুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন-এরকম তো হওয়ার কথা না। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ডিলার পয়েন্ট খুলে রাখার নিয়ম। তিনি সংশ্লিষ্ট ডিলারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,টিসিবির এই কেন্দ্রটির ডিলার রোজা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান। তাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন-ঘটনাটি আমার জানা নেই; পরে জেনে জানাচ্ছি। যদিও তিনি পরবর্তীতে কিছুই জানাননি।
সোমবার সন্ধ্যা ৬.১৩ মিনিটে ডিলার আসাদুজ্জামানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন-দ্রুতই পণ্য বিক্রি হয়ে যাওয়ায় লোকজন চলে এসেছে। যারা কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের পণ্য কি হলো জানতে চাওয়া হলে তিনি আমতা আমতা করেন। এক পর্যায়ে নিজেকে অসুস্থ্য দাবি তিনি বলেন-কেন এমনটি হলো বুঝতে পারছি না।
যশোরে টিসিবির পণ্য নিয়ে নয়-ছয় হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু না। এরআগে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে যশোর শহরের বড়বাজার আলুপট্টির রেজাউল স্টোরে অভিযান চালিয়ে ১০৮ বোতলজাত সয়াবিন তেল উদ্ধার হয়েছিল।
যশোর জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট কে এম আবু নওশাদের নেতৃত্বে ওই অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। টিসিবির ডিলার গৌরঙ্গ পাল বাবু ওই তেল বিক্রি করেছিলেন।যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
সংগ্রহ
Leave a Reply