ঝিকরগাছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের অর্থনীতি ও বানিজ্যিক ভূগোলের সহকারী অধ্যাপক আহম্মদ আলীর বিরুদ্ধে বিধিবর্হিভূত নিয়োগ প্রাপ্তির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এই বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর গত ১৪ আগষ্ট শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপসচিব মো: শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনার আঞ্চলিক পরিচালককে বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তপূর্বক ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ঠ শাখায় প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছেন। যার স্মারক নং-৩৭.০০.০০০০.০৯৫.০৯৯.০১৮.২০২২.৪০৭ ।
এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর শেখ হারুন অর রশীদ জানান। তিনি বলেন,“তদন্ত শুরু হয়েছে। মন্ত্রনালয়ের নির্দেশিত সময়ের মধ্যেই সংশ্লিষ্ঠ শাখায় প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন সেহেতু এই বিষয়ে আপাতত কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে,চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে আহম্মদ আলী ২০০৪ সালে ঝিকরগাছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের অর্থনীতি ও বানিজ্যিক ভূগোল বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পান।
যার স্মারক নং- ঝিমক/১১২/২০০৩-০৪(৩)। তারিখ- ১০-০৬-২০০৪। ওই নিয়োগ পত্রে তাকে ২০ জুন’০৪ তারিখের মধ্যে কলেজের অর্থনীতি ও বানিজ্যিক ভূগোলের প্রভাষক পদে যোগদান করতে বলা হয়। ওই নিয়োগপত্র পাওয়ার পর আহম্মদ আলী ১২ জুন’০৪ তারিখ সকাল ১০ টায় ওই পদে যোগদান করেন।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে তার ওই পদে যোগদানের কোন যোগ্যতায় ছিল না। কারন আহম্মদ আলী অর্থনীতি বা ভূগোল বিষয়ে কোন পড়াশুনা করেননি। তিনি পড়েছেন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে। তিনি যশোর সরকারী এমএম কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ও ১৯৯৭ সালে একই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
১৯৯৫ সালের ২৪ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের শা: ১১/ বিবিধ-৫/৯৪/(অংশ-৬)/৩৯৫ নং স্বারকে জারি করা পরিপত্র মোতাবেক বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মহাবিদ্যালয় সমুহ) এর শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য নিয়োগ যোগ্যতা, অভিঙ্গতা ও বেতন স্কেল পরিশিষ্ট-ক এর ৪ নং ক্রমিকে স্পষ্ট বলা আছে,
কোন বিষয়ের প্রভাষক হতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২য় শ্রেণীর অনার্সসহ ২য় শ্রেণীর ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী এবং সকল পরীক্ষায় ২য় শ্রেণী/ বিভাগ থাকিতে হইবে। অথবা ১ম শ্রেণীর ¯œাতকোত্তর ডিগ্রীসহ সকল পরীক্ষায় ২য় শ্রেণী বা বিভাগ থাকিতে হইবে। এখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বলতে অর্থনীতি ও বানিজ্যিক ভূগোলের প্রভাষক পদের জন্য অর্থনীতি অথবা ভূগোল বিষয়ে ২য় শ্রেণীর অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারী কে বুঝান হয়েছে।
কিন্তু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারী কিভাবে ওই বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন তা কারোর বোধগম্য নয়। যা সরকারী নিয়োগবিধির চরম লংঘন। আহম্মদ আলী শুধু নিয়োগই পাননি নানা ছলচাতুরি করে তিনি এমপিও ভূক্তিও লাভ করেছেন। তার ইনডেক্স নম্বর ক৩০১০৮৮৯ । তিনি বর্তমানে ওই কলেজের অর্থনীতি ও বানিজ্যিক ভূগোল বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত আহম্মদ আলী বলেন, “আমাকে কিভাবে ওই বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন তা সভাপতি ও কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয় ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি দাবি করেন তার নিয়োগ বিধি মোতাবেকই হয়েছে। সে কারনে তিনি এমপিও ভুক্তি লাভ করে অদ্যাবধি ওই পদে সুনামের সাথে চাকুরী করছেন।”
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কলেজের অধ্যক্ষ শাহানুর আলম বলেন,”আহম্মদ আলীর নিয়োগে সরকারী বিধি মেনেই দেওয়া হয়েছিল। যে সময় তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সে সময়ে অর্থনীতি ও বানিজ্যিক ভূগোলের প্রভাষক পদে নিয়োগে সাবজেক্টের কোন বিষয় নিয়োগ বিধিতে স্পষ্ট করা ছিল না।
সে কারনে এক্সপার্টরা আহম্মদ আলীকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ের ছাত্র হওয়া সত্বেও ওই পদে নিয়োগ দেন। তবে ২০১২ সালের পর থেকে অর্থনীতি ও বানিজ্যিক ভূগোল বিষয়ের প্রভাষক পদে কেবল মাত্র অর্থনীতি ও ভূগোল বিভাগের ২য় শ্রেনীর অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারীরাই নিয়োগ লাভ করতে পারবে মর্মে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মাউশি খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক বলেন, আহম্মদ আলীর নিয়োগ সরকারী বিধি মোতাবেক হয়নি। কারন ১৯৯৫ সালের নিয়োগবিধির চরম লংঘন করা হয়েছে। কোন ক্রমেই ব্যবস্থাপনা বিষয়ে লেখাপড়া করে কেউ অর্থনীতি ও বানিজ্যিক ভূগোলের শিক্ষক হতে পারবেন না।
একই ধরনের অভিযোগ ওঠায় ইতিমধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার কয়েকজন শিক্ষকের এমপিও হেল্ডআপ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান। একই সাথে ওই সকল শিক্ষককে এমপিও ভূক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত বেতন ভাতা হিসেবে উত্তোলিত সরকারী অংশেল সমুদয় অর্থ সরকারী কোষাগারে জমাদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগযোগ করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও এমপিও কনসালটেন্ট বাবু সাধন কুমার বিশ^াস বলেন, ১৯৯৫ সালের পরে যাদের নিয়োগ তাদের ওই ভাবে চাকুরী করার কোন সুযোগ নেই। ১৯৯৫ সালে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে সরকার সাবজেক্টের বিষয়টি পরিস্কার ভাবে উল্লেখ করেছেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২য় শ্রেনীর অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারীরাই কেবল মাত্র ওই বিষয়ে শিক্ষকতা করতে পারবেন।
অর্থনীতি ও বানিজ্যিক ভূগোল বিষয়ে প্রভাষক কেবল তারাই হতে পারবেন যাদের অর্থনীতি বা ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা আছে এবং যারা অর্থনীতি অথবা ভূগোলে ২য় শ্রেণীর ¯œাতক ডিগ্রিসহ ওই বিষয়ে ১ম/২য় শ্রেণীর ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী আছে। ব্যবস্থাপনাসহ অন্য যে কোন বিষয়ে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর ডিগ্রীধারীরা ওই পদে চাকুরী করতে পারবেন না।#
Leave a Reply