পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে ১৫০ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান পবিত্র হজ পালন করেছেন শুক্রবার। গত বারের চেয়ে এবার বড় পরিসরে হজ পালিত হলো। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা।’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ এই ধ্বনিতে মুখরিত হয় আরাফাতের ময়দান।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফাতই তো হজ’। যে লোক মুজদালিফায় যাপন করা রাতের ফজরের নামাজের আগে আরাফাতের ময়দানে এসে পৌঁছাবে তার হজ পূর্ণ হয়ে যাবে। ইমাম তিরমিজি (রহ.) ‘আরাফাতই তো হজ’ কথাটির মর্ম এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন : যে ব্যক্তি মুজদালিফায় অবস্থান করা রাতের ফজরের আগে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করেনি, তার হজ হয়নি। এ ব্যাপারে সমগ্র মুসলিম উম্মত একমত।
ইমাম শাফেয়ি (রহ.) ও ইমাম আহমাদ (রহ.)-এর মতে তাকে পরবর্তী বছর হজ করতে হবে।
সৌদি আরবের মক্কায় হাজীগণ শুক্রবার ভোর থেকে আরাফাত ময়দানে হাজির হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য সমবেত হতে শুরু করেন। করোনা মহামারির কারণে পরপর দুই বছর হজযাত্রীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনার পর এবারের হজে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দশ লাখ মুসলমান শরিক হয়েছেন। লটারির মাধ্যমে বাছাই করে বিভিন্ন দেশের ৮ লাখ ৫০ হাজার হজযাত্রীসহ মোট দশ লাখ লোক এই হজের অনুষ্ঠানে শরিক হয়ে গত রাতে মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে মিনা ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে রাত্রি যাপন করেন।
শুক্রবার ফজরের নামাজ শেষে ভোরে তারা মিনা থেকে আরাফাত ময়দানে হাজির হন। এখানেই পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে হযরত মোহাম্মদ (সা:) বিদায় হজের ভাষণ দেন। হজের দিন সকাল থেকে মাগরিবের আজান পর্যন্ত আরাফাত ময়দানে হাজীগণের উপস্থিত থাকা হজের অন্যতম প্রধান শর্ত।
সারাদিন হাজীগণ আরাফাত ময়দানে উপস্থিত থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, নামাজ, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে তারা আল্লাহর ক্ষমা, করুণা লাভের জন্য দোয়া করবেন। আরাফাতে সমবেত হওয়া হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা। আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরায় ইমাম সাহেব খুতবা পাঠ করেন।
খুতবা শোনা গেল বাংলায় : মসজিদে নামিরায় সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে খুতবা প্রদান করেন সৌদির সাবেক বিচারমন্ত্রী ও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের বর্তমান মহাসচিব শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ইসা। এবার হজের খুতবা বাংলাসহ ১৪ ভাষায় সম্প্রচার করা হয়েছে। বাংলায় অনুবাদ করেন উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মাওলানা শোয়াইব রশিদ। খুতবার অনুবাদ সর্বোচ্চসংখ্যক শ্রোতার কাছে পৌঁছাতে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের উদ্যোগ নেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। যে ১৪ ভাষায় আরাফার খুতবা অনূদিত হয়েছে তা হলো- ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, মালাই, উর্দু, ফারসি, রুশ, চায়নিজ, তার্কিশ, বাংলা, হাউসা। নতুন অন্তর্ভুক্ত চারটি ভাষা হলো স্প্যানিশ, হিন্দি, সোয়াহিলি ও তামিল। গত বছর আরাফার খুতবা বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান।
সংগ্রহ অনলাইন ডেস্ক রাতদিন
Leave a Reply