নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)।প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারি ও শিক্ষার্থীদের অনেকে এজন্য দায়ি করছেন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মঈন উদ্দিন এবং প্রশিক্ষণ শাখার ইনচার্জ মোঃ সাঈদীকে।
তারা অভিযোগ করেছেন, যোগদানের পর থেকেই তিনি দুর্নীতি আর অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন টিসিসিকে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি,
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ভর্তি বানিজ্য, সম্মানীর নামে ঘুষ আদায় ছাড়াও বিধি লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। নানামুখী দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা।
যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরী এবং দেশে ও বিদেশে চাকরির সুযোগ করে দেয়াই মূল লক্ষ্য টেকনিকাল ট্রেনিং সেন্টার টিটিসির। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিধি লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মাধ্যমে আখের গোছানোর অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
গত দু’বছরে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি লোপাটের তথ্য বেরিয়ে আসে মোঃ মঈন উদ্দিন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত), প্রশিক্ষণ শাখার ইনচার্জ মোঃ সাঈদী ও মোঃ জাকির হোসেন চীফ্ ইন্সট্রাক্টর (অটোমোটিভ) সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)’র একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেন, হেভী ইকুইপমেন্ট অপারেশন কোর্সে (PRL) বাবদ নেওয়া হয় ৩ হাজার নয়”শ টাকা এবং পরীক্ষায় পাস করানো বাবদ নেওয়া হয় এক হাজার টাকা।
যেখানে পরীক্ষার ফি বাবদ নেওয়ার কথা ১ হাজার ১ শত ৫০ টাকা। কিন্তু জোর করে আদায় করা হয় ৪ হাজার নয় শত থেকে ৫ হাজার টাকা।
বিশেষ করে সেফ প্রকল্পে ভর্তির পূর্বে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫ “শ টাকা নেওয়া হয় যা ফেরৎ যোগ্য হলেও তা ফেরৎ দেওয়া হয় না। টিটিসিতে কম বেশি সব ট্রেডে-ই দূর্নীতি হয়।
তবে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম এবং দুর্নীতি হয় হেভি ইকুইপমেন্ট এন্ড অপারেশন ট্রেডে। খুচরা যন্ত্রাংশ না কিনেও করা হয় বিল ভাওচার।
গাড়ি না চালিয়েও দেখানো হয় ফুয়েল খরচ। ডিজেল প্রতি লিটার ১২০ টাকা মূল্যে ক্রয় করে পরে কম দামে মাত্র ৮০ টাকা লিটার করে বিক্রি হয়। শুধু তাই নয় প্রশিক্ষণও চলে নিজের খেয়াল খুশিমত।
হেভী ইকুইপমেন্ট অপারেশন ট্রেডের অনিয়ম কারসাজিতে অর্থ নিয়ে বহিরাগত এক প্রশিক্ষণার্থীকে ফর্কলিফটার ড্রাইভিং শেখানোর ফলে গত ২৯ মে ২০২৩ তারিখে বেলা ১১ টার দিকে প্রশিক্ষণার্থীর গাড়ী চাপায় নিহত হয় গোলাম রসুল নামে একজন প্রশিক্ষকের। তথাপি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।
তাছাড়া অনেক প্রশিক্ষক অফিসেও আসেন নিজেদের খেয়াল খুশিমত। এমন কি একাধারে কয়েকদিন অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা খাতায় সাক্ষর করার ঘটনাও ঘট প্রতিনিয়ত। এছাড়াও সকাল ৯ টায় হাজিরা দিয়ে বেলা ১১ টার সময় চলে যায় বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষক।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় শত শত প্রবাসগামীদের ৩ দিনের প্রশিক্ষণে জন প্রতি ২’ শ টাকা ফি নেওয়ার নিয়ম থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ২’ শ ৫০ টাকা করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) তে তৈরি হয়েছে বিশাল ক্ষমতাশীল সিন্ডিকেট আর এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী পন্থী বেশকিছু সক্রিয় সদস্য।
তার মধ্যে এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা ও নাটের গুরু হচ্ছে প্রশিক্ষণ শাখার ইনচার্জ মোঃ সাঈদী। তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে, নামমাত্র মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে ভর্তি করা হচ্ছে প্রশিক্ষণার্থী ।
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র টিটিসির কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা অভিযোগ করেন নামমাত্র প্রশিক্ষণ করানো হয়। তাদের ফাঁকিবাজি ও অনিয়ম দূর্নীতির কারণে আমরা প্রকৃত প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত। তিন ভাগের এক ভাগ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
ঘটনার সত্যতা জানতে মোঃ মঈন উদ্দিন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদক কে বলেন, হেভী ইকুইপমেন্ট অপারেশন কোর্সে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আমার জানামতে নেওয়া হয় না। যদি কারও কাছে নিয়ে থাকেন তবে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন সেটা আমি দেখবো, কেনো নিয়েছেন।
এছাড়া আমার অফিসের কারো নামে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অভিযোগ প্রমানিত হলে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তথ্য প্রদান করে সহায়তা করলে কৃতজ্ঞ থাকবো বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply