আগামী ১ নভেম্বর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। এতে যশোর থেকে ঢাকার মধ্যে যাতায়াতের সময় কমে যাবে অর্ধেক। আর এই সুবিধা পাওয়ার জন্য যশোরবাসীর অপেক্ষা ছিল অনেকদিনের।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) থেকে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের অগ্রীম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। এই ট্রেনটি যশোর স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।
খুলনা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী বুধবার “সুন্দরবন এক্সপ্রেস” ১০টি বগি নিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবে। এতে সাত শতাধিক যাত্রী চলাচলের সুযোগ পাবেন। ২ নভেম্বর বেনাপোল থেকে “বেনাপোল এক্সপ্রেস” পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে। এতে করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল আরও সুসংহত হবে।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মাসুদ রানা বলেন, “পদ্মা সেতু হয়ে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ১ নভেম্বর রাত পৌনে ১০টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে। ট্রেনটি বর্তমানে রাত সোয়া ১০টায় খুলনা থেকে ছেড়ে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। ১ নভেম্বর থেকে এটি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাবে।
তিনি বলেন, “ট্রেনটি যশোর স্টেশনে রাত ১১টায় মিনিটে যাত্রাবিরতি করবে। যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব ১১৪ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে এই দূরত্ব পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। বর্তমানে যমুনা সেতু হয়ে এই দূরত্ব পাড়ি দিতে সময় লাগে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা।”
পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে যশোরবাসীর জন্য নতুন যাতায়াতের সুযোগ তৈরি হবে। এতে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যশোরের যোগাযোগ আরও সহজ হবে।
যশোরের শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে যশোরবাসীর জন্য নতুন যাতায়াতের সুযোগ তৈরি হবে। এতে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যশোরের যোগাযোগ আরও সহজ হবে। এটি যশোরের অর্থনীতি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু দিয়ে যশোর থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগবে মাত্র দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়াও, এটি যশোরের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।”
পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে যশোরবাসীর জন্য নতুন যাতায়াতের সুযোগ তৈরি হবে। এতে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যশোরের যোগাযোগ আরও সহজ হবে। এটি যশোরের অর্থনীতি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
যশোর দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও শিল্পকেন্দ্র। পদ্মা সেতু দিয়ে যশোর থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগবে মাত্র দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে। যশোর থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। এতে যশোরের ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
পদ্মা সেতু দিয়ে যশোর থেকে ঢাকা যেতে সময় কমে গেলে চিকিৎসা সেবা নিতেও সুবিধা হবে। যশোরের অনেক মানুষ ঢাকায় চিকিৎসা নিতে যান। পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে এই মানুষদের ঢাকায় যেতে অনেক কম সময় লাগবে। এতে চিকিৎসা সেবা নিতে তাদের খরচও কমবে।
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর প্রায় ১০ মাস পর গত ৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো সেতু অতিক্রম করে পরীক্ষামূলক ট্রেন। সেদিন একটি গ্যাং কার এবং তিন মাস পর গত ৭ সেপ্টেম্বর কমলাপুর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়।
গত ১০ অক্টোবর এই পদ্মা সেতুর ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে উদ্বোধনের পর যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই অপেক্ষা শেষ হবে ১ নভেম্বর।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তম প্রকল্প পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২০১৬ সালের মার্চে। প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ১৬৯ কিলোমিটার রেল লাইনের মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে যশোরের রেল সংযোগ তৈরি করতে প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকায়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে “চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড” (সিআরইসি)। এই প্রকল্পের আওতায় মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলায় নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলপথে মোট ৬০টি বড় সেতু, ২৭২টি কালভার্ট, ১৪টি নতুন স্টেশন ও ৬টি পুরোনো স্টেশন রয়েছে।
Leave a Reply