আজ ৩রা নভেম্বার মোস্তাফিজুল রহমান কলেজ মাঠে বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি বাবু তুষার কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্টিত হয়। অনুষ্টানের সঞ্চালক ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়দর্শি বড়ুয়া। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিথ ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ববিতা বড়ুয়া, মাঈনি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক বাবু তুষার কান্তি বড়ুয়া।
চীবর হচ্ছে বৌদ্ধ ভিক্ষুগণের পরিধেয় বস্ত্র। যেদিন চীবর দান করা হবে সেদিনের সূর্যোদয় হতে পরবর্তী সূর্যোদয় পর্যন্ত সুতা কাটা, কাপড় ধোয়া, কাপড় কাটা, সেলাই, রঙ করা, ধৌত করা ও শুকানো ইত্যাদি একসাথে দূরুহ কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়।
এছাড়া আরও কিছু কঠিন নিয়ম পালনের মধ্য দিয়ে এ চীবর দান সম্পন্ন করতে হয়। তাই চীবর শব্দটির সাথে কঠিন শব্দটি যুক্ত হয়ে এর নামকরণ হয় কঠিন চীবর দান।বর্তমানে অবশ্য বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ও সেলাই করা চীবরও গৃহীরা বৌদ্ধ ভিক্ষুগণকে দান করে থাকেন।
কঠিন চীবর দান প্রচলনের পূর্বে বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ শ্মশানে এবং বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা কাপড় কুড়িয়ে নিয়ে পরিধান করতেন। কিন্তু এ সমস্ত কাপড় অতীব পুরনো,
ময়লা ও দূর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় অস্বাস্থ্যকর বিবেচনায় তথাগত বুদ্ধ কর্তৃক চীবর অর্থাৎ নতুন পরিষ্কার স্বাস্থ্যসম্মত বস্ত্র পরিধান করার অনুমতি দেয়া হয়। যে সমস্ত বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ বিভিন্ন ধর্মীয় আচার পালনের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট বৌদ্ধ বিহারে ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস সম্পন্ন করে থাকেন, তাদেরকে গৃহীরা এ কঠিন চীবর দান করে থাকেন। ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস সম্পন্নের পর যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপন করা হয়।
আর এ প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার আগ মুহূর্তু পর্যন্ত এক মাসের মধ্যে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পূনর্জন্ম ও কর্মফলে বিশ্বাসী বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য কঠিন চীবর দানের গুরুত্ত্ব অপরিসীম।
পৃথিবীতে যত প্রকার দান আছে এরমধ্যে কঠিন চীবর দানই হলো সর্বাপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ। সকল সঞ্চিত দান পারমী এক করলেও একটি মাত্র চীবর দানের সমান পূণ্য পাওয়া যায়না। কঠিন চীবর দানের ফলে অর্জিত পূণ্যরাশি জন্ম-জন্মান্তরে প্রবাহিত হয়ে এর সুফল প্রদান এবং নির্বাণ লাভের হেতু উৎপন্ন করে থাকে। তাই একে দানশ্রেষ্ঠ বা দানোত্তম কঠিন চীবর দান বলা হয়।
কঠিন চীবর দানের অসীম পূণ্য ও এর বহুবিধ গুণের কথা মাথায় রেখে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগণ অত্যন্ত ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বছরে একবার দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
Leave a Reply