বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় এবং নিজ দেশ পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তী থেকে রাজনৈতিক নেতা বনে যাওয়া ইমরান খান বর্তমানে কারাগারে আছেন। রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁসের মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মঙ্গলবার এই রায় দিয়েছেন পাকিস্তানের একটি বিশেষ আদালত।মি. খানকে ২০২২ সালে তার বিরোধীপক্ষ ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ইতোমধ্যে তিন বছরের কারাদণ্ডও ভোগ করছেন তিনি।
তবে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।৭১ বছর বয়সী ইমরান খানের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে পাকিস্তানের বিভিন্ন আদালতে অন্তত কয়েক ডজন মামলার কার্যক্রম চলছে । ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর টানা ২২ বছর মাঠের রাজনীতিতে ব্যাপক সক্রিয়তা শেষে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল ইমরান খানের প্রতিষ্ঠিত দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনাসফ (পিটিআই); সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইমরান খান। কিন্তু মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে, ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল পার্লামেন্টের বিরোধী সদস্যদের ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। তার পর বিভিন্ন সময়ে আদালতে দায়ের হয়েছে মামলাগুলো।খবর বাপসনিউজ।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে ‘অফিসিয়াল গোপনীয়তা রক্ষা আইনের অধীনে মি. খানের বিরুদ্ধে এই রায় দেওয়া হলো।মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল পাকিস্তানের বিশেষ আদালতে। সেখানেই ইমরান এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফের (পিটিআই) সহসভাপতি শাহ মেহমুদ কুরেশিকেও ১০ বছরের জেল দেয়া হয়।
ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের ইসলামাবাদে পাঠানো একটি গোপন কূটনীতিক বার্তার কারণেই কথিত এই সাইফার মামলাটি দায়ের করা হয়েছিলো।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের প্রমাণ হিসেবে একটি তারবার্তা ফাঁস করতে চেয়েছিলেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা বলছে, ওই তারবার্তার মাধ্যমে ইমরান প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে।
ডনের খবরে বলা হয়, সাইফার মামলাটি একটি কূটনৈতিক নথির সঙ্গে সম্পর্কিত। পিটিআই দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, ইমরানকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির তথ্য ছিল ওই নথিতে। তবে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, পিটিআই প্রধান কখনোই নথিগুলো ফেরত দেননি।
এটি ইমরানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বার সাজা ঘোষণার রায়। এর আগে, গেল ৫ আগস্ট তোশাখানা মামলায় ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) তার সেই সাজা স্থগিত করেন। কিন্তু পরে একটি ডিভিশন বেঞ্চ ইমরানের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।অন্যদিকে, শাহ মাহমুদ কোরেশির জন্য এটি প্রথম সাজা।
মঙ্গলবার বিশেষ আদালতের বিচারক আবুল হাসনাত জুলকারনাইন এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। শুনানির শুরুতে ইমরান এবং কোরেশিকে পাকিস্তান দণ্ডবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে একটি প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়।
ইমরান তার বক্তব্য রেকর্ড করার পরে আদালত তাকে সাইফারের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে তিনি বলেন, আমি আমার বিবৃতিতেও একই কথা বলেছি, আমি জানি না। সাইফার আমার অফিসে ছিল।এরপর বিচারক ওই মামলায় দুজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার পরপরই আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন বিচারক। তবে কোরেশির বক্তব্য রেকর্ড করা হয়নি। এ নিয়ে সেখানেই প্রতিবাদ করেন তিনি।
Leave a Reply