বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ রূপ নেয় পদ্মা। প্রতি বছর পদ্মা নদীতে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও থামছে না পদ্মা নদীর পাড় থেকে মাটি কাটা। নদীপাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন হারিয়ে যাচ্ছে চাষিদের ফসলের জমি, অন্যদিকে লাগাতার পাড়ের মাটি কেটে নেয়ায় নদীতে পানি বাড়লেই দেখা দেয় ভয়াবহ ভাঙন।
জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের আওতাধীন পদ্মা নদীর ৬নং বাঁধ এলাকা থেকে এক্সেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। প্রায় এক দশক ধরে চলছে এই কারবার। সম্প্রতি তা বেড়েছে। আইন অমান্য করে নদীপাড়ের মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। স্থানীয় প্রশাসনের চোখ এড়াতে রাতের অন্ধকারেও মাটি কাটছে একাধিক চক্র।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাটিভর্তি শতাধিক ট্রাক্টর। মাটি ব্যবসায়ীদের লুট থেকে বাদ যাচ্ছে না খাসজমি, খাল, নদীর তীর ও তিন ফসলি জমি। এসব মাটির শেষ ঠিকানা হচ্ছে ইটভাটা। রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নাম ভাঙিয়ে একাধিক সিন্ডিকেট খনন যন্ত্র দিয়ে কাটছে নদীপাড়। নামসর্বস্ব কিছু গণমাধ্যমকর্মীও এই সিন্ডিকেটে জড়িত। তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
স্থানীয়রা বলছেন, এক সময় নদী এই এলাকার আরও কাছাকাছি বইতো। পরে বাঁধ নির্মাণ করায় নদী গতিপথ পরিবর্তন করে। নদীর বুকে চর জেগে ওঠে। বিস্তৃীর্ণ এলাকার চরের জমিতে চাষিরা ধান, গম, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। কিন্তু মাটি মাফিয়ারা চাষের জমি কেটে ফেলায় গভীর গর্ত হয়ে যাচ্ছে জমি। নগদ লাভের আশায় না বুঝে মাটি মাফিয়াদের ফসলি জমি দিচ্ছেন কৃষকরা। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০টি লোড ট্রাক্টর স্পারের বাঁধের উপর দিয়ে চলাচল করছে।
ট্রাক্টরে মাটি বহনের কারণে নষ্ট হচ্ছে বেড়িবাঁধ ও সড়ক। সূত্র জানায়, সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর ৬নং বাঁধ এলাকায় এক্সেভেটর মেশিন নিয়ে মাটি কাটছে কালিনগর এলাকার সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের পিএস মাইনুল। মূলত এই মাইনুলের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে মাটি মাফিয়াদের সিন্ডিকেট। একই এলাকার, রেজাউল বকরি, বাবু, ইসমাইল সুধা একাধিক স্পট থেকে মাটি কাটছেন। চলতি বছরের ৩০শে জানুয়ারি অবৈধভাবে মাটি কাটার অপরাধে শফিক নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাঈমা খান।
এরপর কয়েকদিন বন্ধ ছিল। এখন আবার মাটি কাটা শুরু হয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, আমাদের ক্ষতির কথা প্রশাসনের অজানা নয়। কিন্তু মাটির কারবার বন্ধ করার ব্যবস্থা করছে না। যত্রতত্র ইটভাটা চলতে থাকলে মাটির কারবার বন্ধ হবে না। এগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেখার কথা। তবে তারা দেখছে না। সুন্দরপুর এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, পদ্মা নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে কৃষিজমি।
এ ছাড়া পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে মাটি কেটে নিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে অভিযুক্ত মাইনুল বলেন, এখন মাটি কাটা বন্ধ আছে। তিনি আগে মাটি কাটতেন কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধ করার পর বন্ধ করেছেন। বাঁধের কাজ চলছে সেখানে ভরাট দিচ্ছি এটা সরকারি কাজ। যেখান থেকে মাটি কেটে ভরাট করছেন সেটি বৈধ কিনা? এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান মাইনুল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা (ইউএনও) তাছমিনা খাতুন বলেন, কীভাবে, কোথায় কোথায় মাটি কাটা হচ্ছে, তার খোঁজ নিচ্ছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পদ্মাপাড়ের মাটি কাটায় কয়েকজন সাংবাদিকও জড়িত। তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান ইউএনও।
Leave a Reply