রমজান ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাজার। আগুন লেগেছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামে। সিন্ডিকেটে লাগাম টানতে গলদঘর্ম সরকার। দফায় দফায় দাম বেঁধে দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না চড়তে থাকা বাজারদর। এরই মধ্যে বাড়তি মুনাফা কামিয়ে নিতে চালবাজিতে মেতে উঠেছে মিলাররা। কারসাজি করে বাড়িয়ে দিয়েছে চালের দাম। যার প্রভাব গিয়ে পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও। পেটে এক মুঠো ভাত জুটাতে গিয়ে চোখে সরষে ফুল দেখছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে হুট করে গরিবের সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০-২০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে মিলাররা। ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও হু হু করে বাড়ছে দাম। এক কেজি মোটা চাল কিনতেও ৫২-৫৪ টাকা খরচ করতে হচ্ছে এখন। সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের ভীড়ে এবার চালের দামেরও এমন উচ্চলাফে ভোগান্তিতে পড়ে গেছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) নওগাঁ ও দিনাজপুরে মিলপর্যায়ে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হতে দেখা গেছে ২৪০০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগেও ২২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই চাল। পাশাপাশি প্রতি বস্তা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকায়। ৭ দিন আগেও যার দাম ছিল ২৩০০ টাকা। প্রতি বস্তা মিনিকেট চালের দামও ১০০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৩২০০ টাকায়।
অটোরাইস মিল মালিক সমিতি সূত্র বলছে, ধান থেকে চাল তৈরিতে ব্যাঘাত হওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে একটু। এছাড়া সরকার চাল কিনে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করছে ও সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সাধারণ মানুষকে দিচ্ছে। এ কারণে দাম তুলনামূলক বাড়ছে।
অটোরাইস মিল মালিক সমিতি সূত্র বলছে, ধান থেকে চাল তৈরিতে ব্যাঘাত হওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে একটু। এছাড়া সরকার চাল কিনে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করছে ও সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সাধারণ মানুষকে দিচ্ছে। এ কারণে দাম তুলনামূলক বাড়ছে।
মিল মালিক সমিতির এই খোঁড়া যুক্তির ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না খোদ পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের চাল ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, যৌক্তিক কোনও কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন রোজার মাস। এ মাসে মানুষ চাল একটু কম কেনে। বেচাকেনা কম হয়। দামও কম থাকে। কিন্তু এবার উলটো চিত্র। মিলাররা রোজা ঘিরে কারসাজি করছে। বস্তা প্রতি ১০০-২০০ টাকা দাম বাড়িয়ে চাল মিল পর্যায় থেকে বিক্রি করছে। কিনে আনতে বেশি দাম পড়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
রাজধানীর কাওরান বাজারের আল্লাহ দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে মিল পর্যায় থেকে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে না। যে পরিমাণ চাল অর্ডার করা হচ্ছে, দিচ্ছে তার কম। এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে মিল মালিকরা।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বাজার খাতুনগঞ্জের এস কে ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী শামসুল হক বলেন, মিল মালিকরা আমাদেরকে চাল দিচ্ছে না। আবার দিলেও আগের চেয়ে বাড়িয়ে নিচ্ছে দাম। তাই আমরাও বাজারে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছি। এভাবে চক্রাকারে চট্টগ্রামে চালের সংকট তৈরি হচ্ছে এবং দাম বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মিলাররা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। যে কোনও অজুহাতে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ায়। এবারও সেটাই হয়েছে। তাই মূল্য নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চালের দাম কেন বেড়েছে, তা তদারকি করে বের করা হবে।
মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তদারকি করা হবে। অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে।
অনলাইন ডেস্ক
Leave a Reply