যশোরের স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন রকমের ফলসহ পচনশীল পণ্য বাংলাদেশে আমদানি হয়ে থাকে ভারত থেকে। ফলসহ পচনশীল পণ্যের সিএ-এফ এজেন্টের কাজ করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে অনেকেই। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বেনাপোলের সগির ড্রাইভারের পুত্র ছোট রয়েল। কর্তাদের তালে তার মিলিয়ে তাদের আখের গোছানোর হাতিয়ার হিসেবে নিজেরাও বনে গেছে কোটি কোটি টাকার মালিক। কাস্টমস সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ফলের চালান বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে সন্ধ্যার পরে।
ফলের পণ্য পণ্য চালানে ফলের সাথে আর কি থাকে তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। নি¤েœর কর্মকর্তারা ছাড়াও ফলের চালান পরীক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন ডিসি অথেল চৌধুরী, জয়েন্ট কমিশনার (জেসি) সাফায়েত হোসেন এবং এ্যাসেসমেন্টের দায়িত্বে আছেন আরেক জয়েন্ট কমিশনার (জেসি) হাফিজুল ইসলাম। যাদের ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে তিন পক্ষই টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব।
ঢাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দাারের মত সগির ড্রাইভারের পুত্র রয়েল হোসেন ওরফে ছোট রয়েল এখন বেনাপোলে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। অথচ তার সিএ-এফ এজেন্টের কোন লাইসেন্স নেই। তার ছাড় করা ফলের চালানে বিপুল পরিমাণ উমিটেসান সামগ্রী, কসএমটিকস, লেহেঙ্গা, শাড়ী ও থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন দামী দামী পণ্য ফলের আড়ালে নিয়ে আসা হয়েছে। কর্তাদের সন্তুষ্ট করে বিপুল পরিমান টাকার মালিক বনে গেছে ছোট রয়েল।
তার নাকি তিনটি বাড়ি। যার একটি বহুতল নির্মাণাধীন ভবনের ছবি আমাদের হাতে এসেছে। এছাড়াও তার নাকি মাঠে জমি আছে কয়েকশ বিঘা। অর্ধ কোটি টাকার গাড়িতে ছাড়া চড়েন না সগির ড্রাইভারের এই পুত্র। কথিত আছে কর্তাদের সাথে রফা করে এই ছোট রয়েলের মত অন্ততঃ এক ডজন লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী কোটিপতি বনে গেছেন কর্তাদের আর্শিবাদে। প্রতি রাতে এই ফলের চালান থেকে কর্তাাদেরই নাকি আয় ছিল কোটি টাকা।
কমিশনার আব্দুল হাকিমের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শুল্কফাকির এই বাণিজ্য চলে আসছে। যাতে কাস্টমের শীর্ষ এই চার কর্মকর্তাসহ ফলের চালান ছাড় করানোর দায়িত্বরতরা আঙুল ফুঁলে কলাগাছ বনে গেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর ফলের চালান নিয়ে ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ করতো। অথচ মানুষ যখন ঘুমিয়ে যেতো ঠিক সেই সময় সিএ-এফ এজেন্টের সাথে রফা করে পরীক্ষণ এবং শুল্কায়ণ করে খালাশ দেয়া হতো রাত ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।
সেই ট্রাকে ফলের সাথে আর কি আসতো সেটা বলতে পারেন শুধু কাস্টমসের শীর্ষ চার কর্মকর্তাস দায়িতরতরা। লাইসেন্স ছাড়া মাত্র ২/৩ বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার মত আলাদীনের চেরাগ থাকতো ফলের গাড়িতে। যার বিনিময়ে আমদানিকারক, সিএ-এফ এজেন্ট এবং কাস্টমের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কালো টাকার পাহাড় বানিয়েছেন। ২৪ ঘন্টা পন্য খালাসের সরকারি নির্দেশনাকে পুঁজি করে কাস্টম কর্তারা শুল্ক ফাঁকিবাজ চক্র এই পথ বেছে নেন। রাতে পলের চালান প্রবেশের বিষয়টি এনবিএরর (রাজস্ব বোর্ড) শীর্ষ কর্মকর্তাদের নজরে আনলে তারা কঠো পদক্ষেপ নেন। সন্ধ্যার পর এ সমস্ত পণ্য বন্দরে প্রবেশ করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেয় এনবিআর।
প্রতিবছর রমজান মাসকে সামনে রেখে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানিকারকরা বিভিন্ন রকমের ফল, মাছ, কেপসিক্যাম, আতা, টমেটো ইত্যাদি আমদানি করে থাকে। এ মাসে বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক ট্রাকে ফলসহ পচনশীল পণ্য আমদানি হয়। ভারত থেকে এসব পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো সাধারণত সন্ধ্যার পর বন্দরে প্রবেশ করে। অনেক সময় এসব ট্রাক প্রবেশ করতে রাত হয়ে যায়। এনবিআরের নির্দেশ মোতাবেক অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাতে কোন ফল ও মাছের ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না।
তারা বলছে, সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে ফল মাছসহ সব ধরেনর উচ্চ পচনশীল পণ্য বন্দরে প্রবেশ করতে হবে। ফলসহ পচনশীল কোন পণ্য সন্ধ্যা ৬টার পর বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না। তাতেও থেমে নেই অনিয়ম-দুর্নীতি। সন্ধ্যা পণ্য চালান বন্দরে প্রবেশ করিয়ে রাতে সেটি ছাড় করা হচ্ছে। যাতে শুল্কফাঁকিবাজ চক্র এবং দুর্নীতিবাজ কাস্টম কর্তারা কামিয়ে যাচ্ছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। এ বিষয়ে জানার জন্য জয়েন্ট কমিশনার সাফায়েত এবং কমিশনারের মুঠোফোনে কল দিলেও তারা কল রিসিভ করেননি। এমন কি মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা দিলেও কোন উত্তর দেননি।
বিষয়টির ব্যাপারে জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এনবিআর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সৎ এবং সচেতন ব্যবসায়ীরা। তবে ইতিমধ্যে কাস্টম কমিশনারসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা মাঠে দালাল নামিয়ে নিজেদের শেষ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। সাদা পোশাকের লেবাসধারীরা বেজায় তৎপরতা দেখাচ্ছেন।
দুর্নীতিবাজ কাস্টম কর্তাদের রক্ষায় তাদের সাথে লেবাসধারীরা বিশেষ ব্যবস্থ্যায় বিভিন্নভাবে মিথ্যার বেশাতীর আশ্রয় নিচ্ছেন। এ বিষয়ে তাদের প্রিয় ভাজনদের সাথে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। যাতে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার আব্দুল হাকিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফল, মাছ, কেপসিক্যাম,
টমেটোসহ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পচনশীল পণ্য সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই বন্দরে প্রবেশ করতে হবে। রাতে এ জাতীয় পণ্য বন্দরে প্রবেশ করলে অনেকেই সন্দেহ করে। রাতে নানা ধরনের অনিয়মেরও সুযোগ থেকে যায় তাই এসব পণ্য বন্দরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এর দায়িত্ব নেবে না।’ ব্যবসায়ীরা বলছেন, তার এই বক্তব্যই অনেক কিছু প্রমান করে।
Leave a Reply