দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের নতুন এ ভবনটির কাজ শেষ হয় ২০২১ সালে প্রায় তিন বছর হলো দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। তবে সেই ভবনে এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কাস্টমসের পুরোনো ছোট ভবনেই তাদের কাজ কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে। এতে করে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের। সেই সঙ্গে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ ভবনটি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগ বলছে, ছোটখাটো কোনো সমস্যা থাকলে বিষয়টি আমাদের জানালে সমাধান করার ব্যবস্থা করা হবে। আর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভবন ব্যবহারের উপযোগী না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।
১৯৮৭ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগরে দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরু হয়। ভারতের অংশে রয়েছে কলকাতার গেদে। সে সময় বাংলাদেশ-ভারতের পাসপোর্টধারী যাত্রীরা চিকিৎসা, ভ্রমণ ও ব্যবসাসহ নানা কাজে এ চেকপোস্ট দিয়ে আসা-যাওয়া শুরু করেন।
দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ খুব সহজে দর্শনা জয়নগর দিয়ে ভারতের গেদে হয়ে কলকাতায় প্রবেশ করতে পারেন। ফলে এ পথ দিয়ে দুই দেশে যাতায়াত গুরুত্ব পায়।
এরপর থেকেই কাস্টমসের ভবনের ভেতরে অল্প জায়গায় চলে ইমিগ্রেশনের কাজ। ছোট্ট একটি ঘরে বসেন ইমিগ্রেশন ইনচার্জ। আর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের মালামাল যেখানে দেখেন, সেখানেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়।
দেড় বছর পর দর্শনা দিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু দর্শনা সীমান্ত দিয়ে একই পরিবারের ৪ জনকে ফেরত ৪ বছর কারাভোগের পর দেশে ফিরে গেলেন ভারতীয় নাগরিক।
এরপর ইমিগ্রেশনের জন্য ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়লে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল তিনতলা বিশিষ্ট দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ভবনের কাজ শুরু হয়। যা শেষ হয় ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। প্রায় তিন কোটি ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এ ভবন।
যশোরের মেসার্স মহিদুল ইসলাম ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ শেষ করে। ভবন নির্মাণ তিন বছর আগে শেষ হলেও এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি নানা জটিলতার কারণে।
ফলে বাংলাদেশ-ভারত থেকে যাতায়াত করা দুই দেশের যাত্রীরা নতুন ভবনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার জন্য। অথচ নতুন ইমিগ্রেশন ভবনে সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার হাঁপানি গ্রামের বাসিন্দা কোমপিউটার হাসান বলেন, ‘নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করি আমরা।
রোদ-বৃষ্টি ও শীতের সময় বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। এতে কষ্ট হয়। যেখানে ইমিগ্রেশন হয়, সেখানে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই।’
চুয়াডাঙ্গা সদরের কোর্টপাড়ার বাসিন্দা এসএম রেদ্বোয়ান বলেন, ভারতে যাওয়া-আসার সময় ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হয় দুদেশেই। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও চালু হয়নি। বসার মতো ব্যবস্থা নেই। টয়লেট সুবিধা নেই। যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমাধান করলে সবার সুবিধা হবে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহসীন বলেন, তিনতলা ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। দোতলায় পুলিশ সদস্যরা থাকেন। তাহলে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। যদি কোনো সমস্যা থাকে, লিখিতভাবে আমাদের জানালে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজিম উদ্দীন আল আজাদ জানান, ভবন নির্মাণ হলেও সম্পূর্ণ ব্যবহারের উপযোগী হয়নি। অনেক সমস্যা রয়েছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে গণপূর্ত বিভাগকে জানানো হয়েছে।
ভবনের সমস্যা সমাধান হয়ে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু হলে দুর্ভোগ হ্রাস পাবে।চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ-ভারতের প্রায় ৯০০-১০০০ যাত্রী আসা-যাওয়া করেন।
Leave a Reply