সরকারকে জনগণের জান মালের এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির দায়দায়িত্ব নিয়ে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি বরারর পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন ।
ব্লক রেইডের আয়তায় আন্দোলনকারী ছাত্র জনতা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের জীবনের উপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চলমান অভিযান বন্ধ করতে হবে।
আজকেই আন্দোলনকারী ছাত্রদের সাথে আলোচনায় বসে তাদের নয় দফার বাস্তবায়ন করতে হবে।
গত ২৯এ জুলাই ২০২৪, সোমবার সকাল ১১ টায় তোপখানা রোডের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে, গণতন্ত্র মঞ্চের প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমনের পরিচালনায় প্রেস কনফারেন্স এ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম,
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব ড.আবু ইউসুফ সেলিম।
লিখিত বক্তব্যে গণতন্ত্র মঞ্চ চলমান অরাজক পরিস্থিতি সম্পর্কে নিচের পর্যালোচনা পেশ করেন:
১. সরকার নিরস্ত্র ছাত্র জনতার আন্দোলন দমন করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এমনকি যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয় এমন স্নাইপার দিয়ে ৪০ জনেরও বেশি জনগণকে সরাসরি মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ জন চোখে গুলি নিয়ে আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। সর্বমোট মৃত ও আহতদের তালিকা এখনো পর্যন্ত অজানা। হাসপাতালগুলো থেকে ডেথ রেজিস্টার ছিঁড়ে ফেলা, জব্দ করে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদির খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
২. হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করে উপর থেকে গুলি করা হয়েছে, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে, এমনকি আবাসিক ভবনে আক্রমণ করে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে।
৩. গুলিবিদ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্ত ছাত্র জনতাকে হাসপাতালে না নিয়ে বরং তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এমনকি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকেও সম্পূর্ণ বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক একাকি দাঁড়িয়ে থাকা নিরস্ত্র আবু সাঈদ এর মত এমন আরও অনেকেই এভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন।
৪. সেনাবাহিনীকে জনগণের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেখানে জাতিসংঘের লোগো সম্বলিত গাড়িও ব্যবহার করা হয়েছে।
৫. আন্দোলনের বেশ কজন সমন্বয়ককে গুম করা হয়েছে, তাদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করানোর জন্য অন্যায় চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে।
৬. সমস্ত হাসপাতাল ও বেনামী লাশ দাফনের হিসাব না পেলেও নির্যাতন বিরোধী ছাত্ররা এ পর্যন্ত ২৬৬ জন ছাত্র জনতার হত্যা নিশ্চিত করেছেন। এদের মধ্যে ৭৮ ভাগ হলেন ছাত্র। কাজেই সরকারের সকল বয়ান যে মিথ্যা ও তথ্যভিত্তিক নয় তা স্পষ্ট।
৭. সরকার ছাত্রদের হয়রানি, গ্রেফতার, মামলা ইত্যাদি না করার কথা বারবার ঘোষণা দিয়ে বললেও এখনো পর্যন্ত শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক কর্মীদের বিপুল হারে গ্রেফতার মামলা চলছে। এখনো পর্যন্ত মামলার সংখ্যা বাড়ছে ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা গতকাল ২৮ জুলাই পর্যন্ত ছিল ৯১২১ জন। রাস্তাঘাটে তল্লাশির নামে মোবাইল ফোনসহ সাথে জিনিসপত্র চেক করার মাধ্যমে ব্যাক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ ও শারিরীক-মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
গণতন্ত্র মঞ্চ মনে করে যে এই আন্দোলন কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলন হিসাবে তৈরি হলেও জনগণের বিপুল অংশগ্রহণে তা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্র মঞ্চ সরকারকে, জনগণের জান মালের এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির দায়দায়িত্ব নিয়ে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি বরারর পদত্যাগ করার আহ্বান জানায়।
সরকারকে জন অনুভূতির প্রতি সম্মান জানিয়ে অবিলম্বে নিচের দাবি গুলো কার্যকর করে নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়:
১। দ্রুত কারফিউ প্রত্যাহার করে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবিসহ বিশেষ বাহিনীসমূহকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে।
২। ইন্টারনেট ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু করতে হবে।টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের উপর সরকারি হস্তক্ষেপ প্রত্যাহার করে গণমাধ্যমের স্বাধীন দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।
৩। জাতিসংঘের তত্তাবধানে ছাত্র জনতার হত্যাকাণ্ডসহ সমগ্র ঘটনার নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত, অপরাধীদের চিহ্নিত ও তাদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার উপর গুলি, হত্যার পরিকল্পনাকারি, নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়নকারিদের যথাযথ বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
৪। ছাত্র-জনতাসহ বিরোধী দলসমূহের নেতা কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার, রিমান্ডের নামে শারিরীক মানসিক নির্যাতন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক সকল মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৫। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গুম হওয়া ও তুলে নেয়া নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।শিক্ষার্থীদের ৯ দফা গণতান্ত্রিক দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
৬। ব্লক রেইডের ছত্রছায়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর হামলা, আক্রমণ, ভাংচুর, লুটপাট ও নির্যাতন-নিপীড়ন এখুনি বন্ধ করতে হবে।
কর্মসূচি:
হত্যা, গ্রেফতার, নির্যাতনের প্রতিবাদ ও খুনি সরকারের পদত্যাগের দাবি ৩১জুলাই ২০২৪, সকাল ১১ টায়, পুরানা পল্টন মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ।
Leave a Reply