লালমনিরহাটে অলিতে গলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসবের অধিকাংশের নেই প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র। অসাধু কিছু চিকিৎসকের সাথে যোগসাজশ করে ক্লিনিক মালিকগণ চিকিৎসা সেবাকে পরিণত করেছে ডাকাতি সেবাতে। দীর্ঘদিন থেকে স্বাস্থ্য প্রশাসন এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে।
এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকগণ কেউ কেউ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা আবার কেউ কেউ সরকারি হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এদের ছত্রছায়ায় ও স্বাস্থ্য দপ্তরের নেওয়া মাসিক মাসহারার বিনিময়ে চলছে ক্লিনিক ব্যবসা। অবৈধ ক্লিনিকগুলোয় প্রায় সময় হচ্ছে ভুল চিকিৎসা।
সাধারণ কোন রোগ নিয়ে গেলে পরীক্ষা নিরিক্ষার নামে চলে ব্যবসা। সিজার দরকার নেই, কিন্তু তারপরও হচ্ছে সিজার। নবজাতক শিশুকে টেনেহিঁচড়ে বের করা হচ্ছে। সিজার করতে গিয়ে বিভিন্ন অঙ্গহানি ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো অনেকটা কসাইখানার মতো।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ক্লিনিকের লাইসেন্স ছাড়া আরও যেসব লাইসেন্স নিতে হয় তার মধ্যে রয়েছে, পরিবেশ দপ্তরের চারপত্র, খাজনা রসিদ, আয়কর রিটার্ন, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স, ফার্মেসি পরিচালনার জন্য লাইসেন্স, পরিবেশ লাইসেন্স, জেনারেটর লাইসেন্স, ক্যাফেটেরিয়া ও লন্ড্রি লাইসেন্স, ব্লাড ব্যাংক লাইসেন্স, বয়লার লাইসেন্স, কমার্শিয়াল লাইসেন্স, বিএসটিআই লাইসেন্স,
ট্রেডমার্ক লাইসেন্স, গভীর নলকূপ লাইসেন্স, আণবিক শক্তি কমিশন লাইসেন্স, আরসিও লাইসেন্স, মেডিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লাইসেন্স, নারকোটিকস লাইসেন্স, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এনওসি ইত্যাদি।
আবার ক্লিনিকের নিবন্ধন পেতে প্রয়োজন রয়েছে, ভৌত সুবিধা, সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, ডিল্পোমা নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া, ক্লিনারসহ প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যসন্মত পরিবেশ থাকা আবশ্যক।
সূত্র মতে, ৫০ বেডের একটি ক্লিনিক অনুমোদনের ক্ষেত্রে রোগীর ওয়ার্ডের জনপ্রতি বেডের ৮০ বর্গফুট করে ৪ হাজার বর্গফুট জায়গা লাগবে। সেই সাথে ওটি রুম, পোস্ট অপারেটিভ রুম, ওয়াস রুম, ইনস্ট্রুমেন্ট রুম, লেবার রুম, অপেক্ষমাণ রুম, অভ্যর্থনাকক্ষ, অফিস কক্ষ, চেইনজিং রুম, স্টেরিলাইজার রুম, ভাণ্ডার রুমসহ কমপক্ষে ১৩টি রুম থাকতে হয়।
এছাড়াও পুরুষ মহিলাদের জন্য আলাদা প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট, প্রশস্ত সিঁড়ি, জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিল্ডিং (তিন তলার অধিক) হলে লিফটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ওটি রুমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা, ওটি টেবিল, পর্যাপ্ত ওটি লাইট, সাকার মেশিন, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, ডায়াথারমি মেশিন,
জরুরি ওষুধসমুহের ট্রে, রানিং ওয়াটার, অক্সিজেন, আইপিএসের ব্যবস্থা, সাধারণ বর্জ্য, ধারালো বর্জ্য, জীবাণুযুক্ত বর্জ্য, তরল বর্জ্যসহ সব ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও থাকা অত্যাবশ্যকীয়। জনবলকাঠামোগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, তিনজন ডিউটি চিকিৎসক, ছয়জন ডিপ্লোমাধারী নার্স ও প্রয়োজনীয় জনবল থাকতে হবে।
কিন্তু এসব নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়ে বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে রাতারাতি গড়ে তুলছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা চলছে হরদম।
জেলার সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষ প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সরকারি নিয়ম নীতির আওতায় এনে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করার জোর দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালগুলোতে আসা রোগীরা প্রায়ই পড়তে হচ্ছে ভয়ংকর করমের স্বাস্থ্য ঝুকিতে, এমনকি মাঝেমাঝেই ঘটে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনা।
বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, লালমনিরহাট জেলায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের সংখ্যা ৬৯ টি।
এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বৈধ লাইসেন্স আছে বলে আমার ধারণা। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম নীতি অনুযায়ী সকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করা দরকার।
Leave a Reply