বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনার পাথরঘাটার প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ মৎস্য পেশার সঙ্গে জড়িত। মাছ শিকার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। যখনই শুরু হয় ইলিশের মৌসুম, ঠিক তখনই সাগরে শুরু হয়ে যায় নিম্নচাপ আর এই নিম্নচাপ থেকে শুরু হয় ঘূর্ণিঝড়। উপকূলে প্রায় প্রতিবছরই আঘাত হানে কোনো-না কোনো ঘূর্ণিঝড়। এতে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন উপকূলের জেলেরা। মাছ শিকারে গিয়ে দুর্যোগের কবলে পড়ে প্রতিবছর নিখোঁজ হন অসংখ্য জেলে। আর পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নিখোঁজ হয়ে গেলে চরম দারিদ্র্যতার সঙ্গে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন পার করতে হয় স্বজনদের।
১১ মাস আগে বরগুনার পাথরঘাটার সদর উপজেলার রুহিতা গ্রামের নাদিম হোসেন নামে এক জেলে সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন। নাদিম হোসেন ফিরে আসবেন এ আশায় পথ চেয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছেন তার মা। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে নিস্ব হয়ে পড়েছেন তারা। এখন যেন নুন আনতেই পান্তা ফুরায় তাদের। চরম দুরবস্থার মধ্যে তাদের দিনযাপন করতে হচ্ছে।
শুধু নাদিম নয়, গত বছরের ১৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে ট্রলারসহ নিখোঁজ হন ২৫ জেলে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে চরম দারিদ্র্যতাকে সঙ্গী করেছেন তারা। ওই নিখোঁজ জেলেদের ফিরে পেতে স্বজনদের আকুতি শুরু হয়েছে তখন থেকেই। নিখোঁজ জেলেদের ভাগ্যে কি ঘটেছে, তা জানেন না স্বজনরা। এ দিকে ওইসব নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রশাসন।
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, পাথরঘাটা উপজেলায় প্রায় ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৯২ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষই মৎস্য পেশার সঙ্গে জড়িত। নিখোঁজ জেলেদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে প্রায় কাজ শেষ পর্যায়ে। যে জেলে ছয় মাস শেষ হয়ে গেছে ওই সব জেলে পরিবারকে আমরা ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দিচ্ছি। আমরা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কিছু একটা করার চেষ্টা করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ইতোমধ্যে পাথরঘাটা উপজেলার সকল নিখোঁজ জেলেদের নিয়ে একটি তালিকা করা হয়েছে। সেখানে জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় সাংবাদিকদের মতামত নিয়ে তা তৈরি করা হয়েছে। নিখোঁজ জেলেদের নামসহ উপজেলা পরিষদের মধ্যে একটি ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। যাতে করে দেখলেই বোঝা যায় যেন এই উপজেলার কতজন জেলে নিখোঁজ। তাছাড়া নিখোঁজ জেলেদের পরিবারগুলো যেন সহায়তা পান সে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।
সূত্র: আনলাইন ডেস্ক আরটিভি
Leave a Reply