প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল করার হুমকিতে এক কিশোরীকে ৭ বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বাবু নগর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল করিমের ছেলে রাহাত হোসেনের বিরুদ্ধে।
অতঃপর ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে পারিবারিকভাবে রাহাতের সঙ্গে ভিকটিমের বিয়ে হয়।শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা শহর মাইজদীতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিমের মা খায়রুন নেছা এমন অভিযোগ করেন।
খায়রুন নেছা অভিযোগ করে বলেন, ‘রাহাত আমার আপন ভাইয়ের ছেলে হয়। আমার কিশোরী মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে।
ধর্ষণের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭ বছর যাবৎ বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে আমার মেয়ে রাহাতকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে সে তার চাচাতো ভাই শামীমকে দিয়ে ভিকটিমের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও আত্মীয়-স্বজনের মুঠোফোনে ছড়িয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ঘটনার জানাজানি হলে আমি আমার বড়ভাই অভিযুক্ত ধর্ষকের চাচা আবদুর রহিমকে জানাই। প্রথমে তারা এ সম্পর্ক মেনে নিতে চাননি।
পরে আইনের ভয়ে পাঁচদিন যাবৎ সালিস বৈঠকের পর ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর সামাজিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের হস্তক্ষেপে রাহাত ও আমার মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
কিন্তু ওই সময়ে আমার মেয়েকে নিজ বাড়িতে নিতে অস্বীকৃতি জানায় রাহাত। পরে দীর্ঘ ৬ মাস পর ভিকটিমকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে তুলে নিতে রাহাতকে চাপ প্রয়োগ করা হলে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন অভিযুক্ত ধর্ষক রাহাতের চাচা আবদুর রহিম।’
খায়রুন নেছা বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করে আমাদের সংসার চালান। আমার পক্ষে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া সম্ভব না। তারপরও মেয়ের জীবনের চিন্তায় ধার-দেনা করে ৫ লাখ টাকা সংগ্রহের পর অভিযুক্ত রাহাতের চাচা আবদুর রহিমের কাছে দিই।
কিন্তু বাকি ১৫ লাখ টাকা না দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর আমি আমার মেয়েকে নিয়ে রাহাতের বাড়িতে গিয়ে ঘরে তোলার দাবি জানালে আবদুর রহিম,
রাহাতসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা আমি এবং আমার মেয়েকে জোরপূর্বক মারধর করে পার্শ্ববর্তী এলাকার কাজী ডেকে ভিকটিমকে দিয়ে জোরপূর্বক তালাক নামায় স্বাক্ষর করান।
এবং ভিকটিমের হাতে নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করে নেন। ভিডিও ধারণ শেষ হলে, তারা পুনরায় টাকাগুলো সব হাতিয়ে নিয়ে আমাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।’
এ সময় নির্যাতনের শিকার ভিকটিম মেয়েটি গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও ধারণ করেছে রাহাত।
ওই অশ্লীল ছবি ও ভিডিও এর ভয় দেখিয়ে দীর্ঘ ৭ বছর রাহাত আমাকে পুতুলের মতো ব্যবহার করেছে, আমার সব কেড়ে নিয়েছে। আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা যেন তার সামনে না যায় এবং তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ কোথাও না করি, সেই জন্যে রাহাত আমাকে হুমকি দিচ্ছে।
সে বলছে, যদি তার বিরুদ্ধে কথা বলি তাহলে আমার অশ্লীল ছবি ও ভিডিও সব ভাইরাল করে দেবে, আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে লাশ গুম করবে। ধর্ষক রাহাত, তার দোসর আবদুর রহিম ও শামীমের হাত থেকে বাঁচতে এবং তাদের গ্রেপ্তারপূর্বক বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী এবং তার পরিবারের সদস্যরা।’
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘খায়রুন নেছা নামে এক নারী এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র অনলাইন ডেস্ক আরটিভি
Leave a Reply