জেলা পরিষদের,যশোর-খুলনা মহাসড়কের ৪৮০টি সেগুন ও মেহেগুনী প্রজাতির ৮ কোটি মূল্যের গাছ মাত্র ৪ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন। বাকী ৪ কোটি টাকা আশরাফ হোসেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুলের পিএ এজাজের মাধ্যমে ভাগাভাগি করেছেন। সূত্রগুলো আরো বলেছেন,বিক্রি করা ৪ কোটি টাকার ৪ গ্রুপের মধ্যে ১ম গ্রুপের সত্ত্বাধিকারী যশোর শহরের মাছ বাজারের বাসিন্দা মেসার্স শহিদুল এন্টার প্রাইজের দাখিলকৃত ৯৩ লাখ টাকার ২৬লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আশরাফ হোসেন নিজের ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা দেন।
জেলা পরিষদের একাধিক কর্মচারী জানান,বিগত ২০২১ সালে যশোর-চুকনগর সড়কের গাছ টেন্ডার হয়। ওই সড়কে সামাজিক বন বিভাগের বনায়ন ছিল। বন বিভাগ ওই সড়কে জেলা পরিষদের টেন্ডারের আগে তারা টেন্ডার দেয়। সেই সময় জেলা পরিষদ ও বন বিভাগের মধ্যে গাছ রশি টানাটানির অবসান ঘটানোর জন্য সেই সময় শর্ত ছিল ওই সড়কে অবস্থিত যে সকল গাছের বেড় ৩ ফুটের কম সেগুলো বন বিভাগের। সেই ক্ষেত্রে সেময় বন বিভাগ ৩ ফুটের চেয়ে বেশী বেড়ের ৪১টি গাছ নাম্বার দেয়। তবে শর্ত চুড়ান্ত তালিকা হতে সেগুলো বাদ রাখেন শর্ত মোতাবেক। ওই সড়কে ৩ ফুটের বেশী বেড় এর গাছে বন বিভাগের নাম্বার থাকায় সে সময় জেলা পরিষদ টেন্ডারে তোলেনি।
সেই সময় বন বিভাগ ও জেলা পরিষদ ওই সড়কে বিবাদমান গাছগুলো টেন্ডার থেকে বাদ রাখেন। তবে উভয় বিভাগ তাদের গাছ দাবি করায় ওই সময় খুলনা বিভাগে স্থানীয় সরকার দপ্তরের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকত দপ্তরে উভয় বিভাগের উপস্থিতিতে শুনানীর এক পর্যায় ৪১টি গাছ জেলা পরিষদের পক্ষে রায় আসেন। সে সময় জেলা পরিষদের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলাচালে বন বিভাগের দেয়া টেন্ডারের গাছ গুলো কাটার কার্যক্রম শেষ হয়। জেলা পরিষদের টেন্ডারে দেয়া গাছ কাটার পরেও ওই ৪১টি গাছ দাঁড়িয়ে ছিল।
তখন আশরাফ হোসেন বন বিভাগের ঠিকাদার তার ঘনিষ্ট সামছুর রহমানের কাছে ওই গাছ গুলো বিক্রি করে দেন। ওই সময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে বদলী হওয়ায় বিষয়টি আড়াল হওয়ার সুযোগে আশরাফ হোসেন গাছগুলো হজম করে ফেলেন। খবর পেয়ে ওই সময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল জেলা পরিষদের একাধিক কর্মচারীকে পাঠালে আশরাফ হোসেন তাদেরকে বলেন,ওই গাছ বন বিভাগের। তাই বন বিভাগের ঠিকাদার কেটে নিয়েছেন।ওই সময় কর্মরত বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল খালেক ও দায়িত্বে থাকা ফরেষ্টার ফজলুর রহমান এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন,গাছগুলো অফিসিয়ালভাবে জেলা পরিষদের পক্ষে রায় হয়েছে। সেই সময় জেলা পরিষদের আশরাফ হোসেন গাছ গুলো কাটার অনুমতি দিয়েছেন বলে তারা শুনেছে। সূত্রগুলো বলেছেন,সে সময় বন বিভাগের নির্ধারণ (এস্টিমেট) অনুযায়ী গাছগুলোর মূল্য ৮,লাখ৬৬ হাজার ১৯৭ টাকা করা হয়েছিল।
সূত্রগুলো জানিয়েছেন, যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের সিঙ্গিয়া রেলষ্টেশনের পাশে রেলওয়ের একটি রেন্ট্রি গাছ কাটা হলে গাছ ক্রেতা অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্যর কাছে আশরাফ হোসেন ১লাখ টাকা দাবি করেন। সে সময় আশরাফ হোসেন উক্ত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যর কাছে নিজেকে জেলা পরিষদের সার্ভেযার পরিচয় দিয়ে বলেন, এই গাছ জেলা পরিষদের আওতাধীন সড়কের। গাছ বাবদ টাকা না দিলে তিনি উক্ত গাছ ক্রেতাকে মামলা করার হুমকী দেন। উক্ত গাছ ক্রেতা রেলওয়ের কাছ থেকে গাছ কিনেছেন বলে জেলা পরিষদের কর্মচারী আশরাফ হোসেনকে তার দাবিকৃত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন আশরাফ হোসেন উক্ত অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্যর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন।
পরে মামলা চলাচালে উক্ত গাছ যে সীমানায় ছিল তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায় উক্ত জায়গা জেলা পরিষদের নয়। অপর একটি সূত্র বলেছেন,গত কয়েক মাস পূর্বে আশরাফ হোসেন যশোর-বেনাপোল সড়কের বেনাপোল গেট এবং নাভারণ বাজার থেকে মহাসড়কের উপর নির্মিত বড় বড় গাছের ডালপালা কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন। উক্ত গাছ টাকা ও বিক্রির জন্য কোন অনুমতি আশরাফ হোসেনের কাছে সে সময় ছিলো না। তবে ওই সড়কের গাছের ডালপালা আশরাফ হোসেন তার ঘনিষ্ঠ গাছ চুরি সিন্ডিকেটের অন্যতম যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন সাজু ও তার ছেলের কাছে বিক্রি করেন। গাছ বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ পকেটস্থ করার পর শার্শা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খবর পেয়ে আশরাফ হোসেনকে তার দপ্তরে ডেকে পাঠান। আশরাফ হোসেন শার্শা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে যাওয়ার পর তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার অফিসে কর্মরত আনসার সদস্যদের উপজেলা চত্ত্বরে বেঁধে রাখতে বলে তাকে চোর বলে আখ্যায়িত করেন। পরে বিষয়টি জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের অনুরোধে আশরাফ হোসেনকে মুক্ত করা হয়।
সূত্রগুলো বলেছেন, আশরাফ হোসেন জেলা পরিষদে ৮ম শ্রেনীর পাশের সনদ দিয়ে ইলেকট্রিশিয়ান পদে চাকুরী নেওয়ার পর নিজেকে সার্ভেয়ার ও বৃৃক্ষ সংরক্ষক পরিচয় দিয়ে জেলা পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন সম্পদ কৌশলে লিজ ও বিক্রি করে মোটা অংকের অংকের অর্থ পকেটস্থ করে ব্যয় বহুল একটি বাড়ি নিমার্ণ করেছেন।
আশরাফ হোসেনের দূর্নীতির খবর তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানিয়েছেন জেলা পরিষদে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাগন। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে, অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। তবে আশরাফ হোসেনকে তার পদ ইলেকট্রিশিয়ান পদ ছাড়া অন্য কোন পরিচয় না দেওয়ার জন্য সর্তক করা হয়েছে।
Leave a Reply