বছরের প্রথম দিনেই ভূমিকম্পের কবলে পড়ে জাপান। বিভিন্ন দেশ যখন বর্ষবরণের আনন্দে মেতে ওঠে ঠিক সেসময় ৭.৬ মাত্রার তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে উদীয়মান সূর্যের দেশটি। আঘাত হানে সুনামিও। এতে প্রাণ হারান শতাধিক মানুষ, ক্ষয়ক্ষতিও হয় বিস্তর।
জানুয়ারির ৭ তারিখে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। এতে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তবে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন ভোট বয়কট করে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে আমেরিকা। তবে সমস্ত কিছু নস্যাৎ করে ১০ জানুয়ারি শপথ নেন মুজিবকন্যা।
চলতি বছরের জানুয়ারির ১৩ তারিখে তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন লাই চিং তে ওরফে উইলিয়াম লাই। এর আগে তিনিই ছিলেন তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট। যদিও লাইয়ের এই জয়ে অস্বস্তি বাড়ে চীনের।
পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। জেল থেকেই জনগণের জন্য বিশেষ বার্তা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভোটের ফল গণনার পর দেখা যায় সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পান ইমরানের দল পিটিআই। দ্বিতীয় স্থানে থাকে শাহবাজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। পিটিআই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার কারণে সরকার গঠন করতে পারেননি। ফলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেন শেহবাজ শরিফ।
চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পয়লা নম্বর ‘শত্রু’ অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যু হয়। রাশিয়ার ফেডারেল জেল বিবৃতি জারি করে জানায়, হাঁটতে বেরিয়েছিলেন নাভালনি। তখনই অসুস্থতা বোধ করেন রাশিয়ার বিরোধী নেতা। এরপরই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে যান তিনি। দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স টিম ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় ১৭ মার্চ। নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর দেখা যায় ভ্লাদিমির পুতিনের ঝুলিতে রয়েছে ৮৭ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট। ফলে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে ফের রাশিয়ার মসনদে বসেন পুতিন। প্রেসিডেন্ট হিসাবে টানা পঞ্চমবার শপথ নেন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ, বিরোধী নেতা নাভালনির মৃত্যু কোনো কিছুই প্রভাব ফেলেনি নির্বাচনে।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এতে প্রাণ হারান অন্তত ১৩ জন। তাদের মধ্যে ছিলেন তিন ইরানি সেনাকর্তাও। এই হামলার পিছনে ইজরায়েলকে দায়ী করে তেহরান। লাগাতার সতর্কবার্তার পর ১৩ এপ্রিল ইজরায়েলে একের পর এক মিসাইল ছুড়তে শুরু করে ইরান। সব মিলিয়ে ৩০০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ১৯ এপ্রিল ইসলামিক দেশটিকে পালটা মার দেয় ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ইরানের একাধিক শহর। ছড়িয়ে পড়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক।
তাইওয়ানে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয় ৩ এপ্রিল। রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৪। এতে প্রাণ হারান প্রায় ১০০ মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও হয় ব্যাপক। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বড় বড় হোটেল। ফাটল ধরে একাধিক সড়কে। গত ২৫ বছরের মধ্যে এটাই তাইওয়ানে হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।
ব্রাজিল ৫ মে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। এতে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায় ও বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। প্লাবনে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। বন্যার জেরে ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ রিও গ্র্যান্ডে ডো সুলে পানির তলায় চলে যায়। এই প্রদেশের রাজধানী তথা ব্রাজিলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর পোর্তো আলেগ্রের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ ছিল। সব মিলিয়ে অন্তত ৪৯৭টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি প্রেসিডেন্ট রাইসি ১৯ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। জানা গেছে, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আরস নদীর ওপরে একটি বাঁধ উদ্বোধন করার কথা ছিল রাইসির। সেই কর্মসূচিই ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনে। একটি পার্বত্য অঞ্চল পেরিয়ে যাওয়ার সময় হেলিকপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উত্তর-পশ্চিম ইরানের একটি পাহাড়ে আছড়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় ইজরায়েলের দিকে ষড়যন্ত্রের আঙুল ওঠে। তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে ইসরায়েল।
চলতি বছরের ৫ জুলাই ব্রিটেনের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়। ফলাফলে নজির গড়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন কেয়ার স্টারমার। তার দল লেবার পার্টির কাছে ভরাডুবি হয় কনজারভেটিভ পার্টির। প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান ঋষি সুনাক। ১৪ বছর পর টোরি শাসনের অবসান ঘটে রাজার দেশে।
ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর নির্বাচন হয় ইরানে। ৬ জুলাই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মাসুদ পেজেস্কিয়ান। তিনি পরাজিত করেন সাইদ জালিলিকে। পেজেস্কিয়ানের শপথগ্রহণে গিয়েই গুপ্তঘাতকের হাতে তেহরানে মৃত্যু হয় হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়েহর। এই খুনে অভিযোগের আঙুল ওঠে ইজরায়েলের দিকে।
নির্বাচন জেতার আট মাসের মধ্যেই গদিচ্যুত হন শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট ছা-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন তিনি। এরপর ৮ আগস্ট বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর পেজার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে লেবানন। সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লার সদস্যসহ প্রাণ হারান অন্তত ৫০০ জন। আহতের সংখ্যা ৪ হাজার পেরিয়ে যায়। এই ঘটনার পরদিন থেকেই লেবাননে হামলা শুরু করে ইজরায়েল। ২৭ সেপ্টেম্বর ইজরায়েলি সেনার অভিযানে নিহত হন হিজবুল্লা প্রধান হাসান নাসরুল্লা। কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর উত্তরসূরি হাশেম সাফেদ্দিনকেও খতম করে তেল আভিভ। নয়া কমান্ডার হিসাবে নাইম কাসেমের নাম ঘোষণা করে হিজবুল্লা। এই সংঘাতে ইরানও জড়িয়ে যায়।
আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় ৫ নভেম্বর। শুরুতে ৮২ বছরের জো বাইডেনকে প্রার্থী হিসেব বেছে নেয় ডেমোক্র্যাট। পরে ভোটের লড়াই থেকে সরে যান বাইডেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন কমলা হ্যারিস। তবে কমলাকে পিছনে ফেলে রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতন হয়। আল কায়দার শাখা সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নেতৃত্বে আলেপ্পো দখল করে নেওয়ার ঘোষণা দেন বিদ্রোহীরা। তারপর বিভিন্ন শহর দখল করার পর ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামাস্কাসে পৌঁছান বিদ্রোহীরা। এরপর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আসাদ। এর মধ্য দিয়ে পতন ঘটে আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনের।
সূত্র : অনলাইন ডেস্ক আরটিভি
Leave a Reply