যশোর শহরতলীর পুলেরহাট এলাকায় আদ-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজের পিছনে ওয়াজ মাহফিল এর আয়োজনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে মেডিকেল কলেজের পিছনের মাঠ।আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তিন দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের সুবিধার্থে এই মাঠের একাংশে শিক্ষক শওকত আলীর মালিকানাধীন বাড়ি ও গাছপালাসহ দুটি বাড়ি উচ্ছেদ করে সমান করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক শওকত আলীর স্ত্রী হাফিজা খাতুন রোববার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন,২০১২ সালের ১৭ মে যশোর সদরের চাঁচড়া বেড়বাড়ি মৌজায় জালাল উদ্দিনের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর তা কিতাব আলী নামে একজনকে শর্তসাপেক্ষে ভাড়া দেন। পরবর্তী ওই জমির পাশে আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন। এরপর থেকে আদ্-দ্বীন কর্তৃপক্ষ সরকারি রাস্তা আটকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি জমি বিক্রির প্রস্তাব দিলেও তারা তা গ্রহণ করেনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের কর্মী হান্নান,আশিক ও রনিসহ ২০/৩০জন স্কেভেটর ও বুলডোজার নিয়ে তার বাড়িতে যান। এরপর ভাড়াটিয়া কিতাব আলীর হাতে ৩৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি উচ্ছেদ ও গাছপালা কেটে দেয়। পরের দিন খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন,তার বাড়ির ধ্বংসাবশেষও নেই। এ ঘটনায় তিনি আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের তিন কর্মীও ভাড়াাটিয়া কিতাব আলী, তার ও ছেলের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা হয় ভাড়াটিয়া হালিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন,আদ-দ্বীন হাসপাতাল স্থাপনের পর থেকেই আমাদের জ্বালাতন করে আসছে। তারা সরকারি ম্যাপের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর আদ্-দ্বীনের কর্মী হান্নানের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন এসে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে। এরপর একটা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে ৩৫ হাজার টাকা দেয় মালামাল নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য। এবং স্কেভেটর দিয়ে গাছ উঠিয়ে যায়গা সমান করে দিয়ে যায়।
দিনের আলোয় এই কাজ তারা করেছে এবং সবাই দেখেছে।স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান হ্যাপী বলেন,ওই জমির পাশে আমার ৩ শতক জমি আছে। আদ্-দ্বীনের অত্যাচারে তাদের কাছে ১৬ লাখ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। আমাকে দুই এক দিনের মধ্যে এ জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন,এখানে একটি ওয়াজ মাহফিল হবে। ৬/৭ জন বড় বড় বক্তা আসবেন। এ কারনে খাদিজা খাতুনের জমি এবং আরও অপর একটি জমিসহ বাড়ি উচ্ছেদ করে দিয়েছে আদ্-দ্বীন। কিন্তু ওই জমি আদ্-দ্বীন ক্রয় করেনি। এখানে আরও ১৪/১৫ টি পরিবার ছিলো। আদ্-দ্বীনের অত্যাচারে তারা জমি বিক্রি করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
এ ব্যাপারে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের পাবলিক রিলেশন অফিসার তরিকুল ইসলাম তারেক বলেন,খাজিদার জমিটি আমরা দখল করিনি। তার যে ভাড়াটিয়া তিনি ঘর বাড়ি এবং গাছপালা নিজের দাবি করে স্বেচ্ছায় নিয়ে চলে গেছেন। আমাদের কাছে তিনি লিখিতও দিয়ে গেছেন। আমাদের বড় একটি ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে সেটিকে বিতর্কিত করতে একটি পক্ষ এই অপপ্রচার শুরু করেছে।
বিষয়টি জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের দৃষ্টিতে আনলে তিনি বলেন,এক থেকে ৩ জানুয়ারি ওয়াজ মাহফিল হবে বিষয়টি আমি জানি। কিন্তু কারো বসতভিটা উচ্ছেদ করে সমান করা হয়েছে এটি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার আদ্ব-দ্বীন ফাউন্ডেশনের তিন কর্মী ও ভাড়াটিয়া কিতাব আলী, তার স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ করেছেন।
Leave a Reply