আর্জেন্টিনার জন্য ম্যাচটা ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। সেই ম্যাচে প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির পেনাল্টি ঠেকিয়ে আলবিসেলেস্তেদের বড় একটা ভয়ই দেখিয়েছিলেন পোল্যান্ড গোলরক্ষক। তবে আর্জেন্টিনা সে ভয়, সে শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডের পারফর্ম্যান্সে। অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার আর ইউলিয়ান অ্যালভারেজের দারুণ দুটো গোলে জয় তুলে নিয়েছে ২-০ গোলে। তাতে গ্রুপ সেরা হয়েই শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ফেলল আকাশি-সাদারা।
গ্রুপসেরা হতে হলে জিততেই হবে, এমন সমীকরণের সামনে থেকে আর্জেন্টিনা পোল্যান্ডের বিপক্ষে শুরুটা দুর্দান্তই করেছিল। শুরুর দশ মিনিটেই মেসির দুটো শট ঠেকাতে হয় পোলিশ গোলরক্ষক ভয়চেখ সজেসনিকে। এরপর পুরো প্রথমার্ধে ঠেকাতে হলো আরও ৫টি শট। ঠেকালেন লিওনেল মেসির পেনাল্টিও!
সেটা পেনাল্টি ছিল কি না, সেটা নিয়েও অবশ্য প্রশ্ন উঠতে পারে। বাম পাশ থেকে আসা ক্রসে লাফিয়ে উঠে হেড করতে চেয়েছিলেন মেসি, তার হেডের পর তার চোখে হাত লাগে সজেসনির। ভিএআর দেখে এসে পেনাল্টি দেন রেফারি। মেসির নেওয়া স্পটকিকটা বাম পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন পোলিশ গোলরক্ষক। তাতে প্রথমার্ধে আর গোল পায়নি আর্জেন্টিনা।
তবে সে গোলের অপেক্ষাটা আলবিসেলেস্তেদের বেশিক্ষণ করতে হয়নি দলটিকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আর্জেন্টিনাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেন ম্যাক অ্যালিস্টার। বিরতির পর প্রথম আক্রমণেই ডান পাশ দিয়ে আক্রমণে ওঠা নাহুয়েল মলিনা নিচু ক্রস বাড়ান বক্সে। সেটা পোলিশ রক্ষণ বিপদমুক্ত করতে পারেনি। ফাঁকায় থাকা ম্যাক অ্যালিস্টার বুদ্ধিদীপ্ত এক শটে বলটা জালে জড়ান। তাতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচে যেন আর্জেন্টিনা।
এক গোলের লিড যে কোনো সময় উবে যেতে পারে। সে অভিজ্ঞতা আর্জেন্টিনার হয়েছে সৌদি আরব ম্যাচেই। তেমন কিছুর পুনরাবৃত্তি এড়াতে আর্জেন্টিনাকে গোল পেতে হতো আরও একটি। ৬৭ মিনিটে সে গোলটা পাইয়ে দেন অ্যালভারেজ। দ্বিতীয় ম্যাচের গোলদাতা এনজো ফের্নান্দেজের বাড়ানো বলে গোলটা করেন তিনই। বক্সের ভেতর থেকে তিনি যা করলেন, তা যেন সেই মেক্সিকো ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই! শুধু পার্থক্য, সেদিনের শটটা নিয়েছিলেন ফের্নান্দেজ, আজ অ্যালভারেজ। বক্সের ভেতর বাম পাশ থেকে শট নেন ফার পোস্টে, সেটা গোলরক্ষক ভয়চেখ সজেসনির হাত ফাঁকি দিয়ে জড়ায় জালে। তাতেই দুই গোলের স্বস্তি চলে আসে আর্জেন্টিনা শিবিরে।
শেষমেশ আর্জেন্টিনা সেই দুই গোল নিয়েই শেষ করেছে ম্যাচটা। সৌদি আরব হেরে যাওয়ায় নিশ্চিত হয়ে যায় আর্জেন্টিনার গ্রুপ শ্রেষ্ঠত্বও। এর ফলে আকাশি-সাদারা শেষ ষোলোয় প্রতিপক্ষ হিসেবে পেল অস্ট্রেলিয়াকে।
শেষ দিনে এত সমীকরণ হতো না আর্জেন্টিনার, যদি শুরুর ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে হেরে না বসতেন মেসিরা। সেই ম্যাচে হেরেই প্রতিটা ম্যাচ প্রায় নকআউট হয়ে যায় কোচ লিওনেল স্ক্যালোনির শিষ্যদের। তবে দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা সে পরীক্ষায় উতরে গেছে ভালোভাবেই। দুই ম্যাচের দুটোতেই জিতেছে, তাও আবার কোনো গোল হজম না করেই। শেষ ষোলোটাও নিশ্চিত হয়ে গেছে তাতে, তাও আবার গ্রুপসেরা হয়েই!
Leave a Reply