বিশ্বকাপে ভাটার টান লেগেছে। দোহা আবার খালি হতে শুরু করেছে। যাত্রী কমে যাওয়ায় উবারচালকরাও আহাজারি করছেন। তাঁদের চাওয়া, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা যেন টিকে থাকে বিশ্বকাপের
বাস্তবে দুই দলের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তারা আজকে টিকলে ফাইনালে অন্তত একটি দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল পরাশক্তি থাকবে।
আজকের দিনটি তাই কাতার বিশ্বকাপের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা খেলবে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে আর ব্রাজিল মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়ার। এই দুটি ম্যাচের গর্ভেই লুকিয়ে আছে বিশ্বকাপের ভাগ্য। দুটি ম্যাচই পারে টুর্নামেন্ট জমিয়ে তুলতে এবং ১৯৯০ বিশ্বকাপের পর আরেকটি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের মহা আকর্ষণের মঞ্চ তৈরি করতে। তার আগে আজ কোয়ার্টার ফাইনাল জিততে হবে মেসির আর্জেন্টিনা ও নেইমারের ব্রাজিলকে। না জিতলে যে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাবে। এই বিশ্বকাপে দেশে আর্জেন্টিনার সমর্থকের এমন বিস্ফোরণ হয়েছে, সেটা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম হয়ে পৌঁছে গেছে খোদ আর্জেন্টিনায়। মজাটা হলো, আর্জেন্টাইনরাও এখন পাল্টা সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য একটা পেজ খুলে বসেছে! ওই পেজে সব আর্জেন্টাইন মিলে লাল-সবুজের ক্রিকেটের শুভ কামনা জানাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ কেন, পুরো বিশ্বেই লাতিন ফুটবলের অন্য রকম এক মোহ আছে। তাদের ফুটবলে আছে নান্দনিক সৌন্দর্য, যা ফুটবলারের পায়ের কারুকাজে রসোত্তীর্ণ হয়। যেটা হয়তো ইউরোপের টেকটিক্যাল ফুটবলে খুব চোখে পড়ে না।
দুটি কোয়ার্টার ফাইনালে আজ হবে সেই লাতিন বনাম ইউরোপের লড়াই। আধুনিক ফুটবল কোচের কৌশলে এমনভাবে বন্দি হয়ে গেছে সেখানে ফুটবলারের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য খুব প্রাধান্য পায় না, গোল হয়ে গেছে শেষ কথা। সেই ফলনির্ভর ফুটবলে সাধারণ মানুষের মন ভরে না বলে মানুষ আলিঙ্গন করে নিয়েছে লিওনেল মেসি-নেইমারদের। তাদের পায়ে এখনো ফুল হয়ে ফোটে ফুটবল। কাতার বিশ্বকাপ এখন পর্যন্ত মেসি-ম্যাজিকে দীপ্তি ছড়াচ্ছে। আর্জেন্টিনার চার ম্যাচ বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায়, পুরো দল মিলে খেলেছে একটি ম্যাচ আর বাকি তিনটিতেই মেসির জাদুকরীতে পার হয়েছে দল। তবে কোয়ার্টারের ফাইনালের ম্যাচ নিয়ে একটু দুশ্চিন্তা কাজ করছে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মনে। কারণ নেদারল্যান্ডস কঠিন প্রতিপক্ষ। ডাচ ফুটবলের সোনালি দিনের পরম্পরা না থাকলেও এই দল চমৎকার ফুটবল খেলে টানা ১৯ ম্যাচ অপরাজিত। তাদের দলে মেসির মতো কোনো বড় তারকা নেই, তবে ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলা ডাচ ফুটবলারদের দলীয় শক্তিতে লুইস ফন হালের দল সামলে নিতে জানে যেকোনো বড় চ্যালেঞ্জারকে। আবার এই ফুটবলাররাই তাদের কোচ ফন হালের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে চান বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে!
ওদিকে ব্রাজিল ‘হেক্সা মিশন’-এ কাতারে এসে এখন পর্যন্ত বড় দলের মুখোমুখি হয়নি। বেঞ্চের দল খেলাতে গিয়ে গ্রুপের শেষ ম্যাচে হেরেছে ক্যামেরুনের কাছে। এই হারে সাময়িকভাবে ‘গৃহশান্তি’ হুমকির মুখে পড়লেও সেটা স্থায়ী হয়নি। শেষ ষোলোতে প্রচণ্ড দাপটে খেলে দক্ষিণ কোরিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে পথে ফিরেছে সেলেসাওরা। প্রথমবারের মতো তারা আজ বড় প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবে। গতবারের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়া বেশ অভিজ্ঞ দল। দলে বয়সের ভার থাকলেও মদ্রিচদের পায়ে এখনো ফুটবল ভেলকি আছে। গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচের আছে টাইব্রেকার জেতানোর মন্ত্র। তাদের বিপক্ষে ভিনি-নেইমার শো সফল হলে ব্রাজিল পৌঁছে যাবে সেমিফাইনালে।
অনেকের চোখে ব্রাজিলের হার্ডল সহজ। আলবিসেলেস্তেদের নিয়েই মিলছে না হিসাব। কিন্তু মেসিকে মেলাতেই হবে, নইলে যে বিশ্বকাপের সব আকর্ষণ শেষ হয়ে যাবে। আয়োজকরা যে পরিমাণ বিদেশি দর্শক আশা করেছিল, সেটা এমনিতেই হয়নি। তাদের প্রত্যাশা ছিল ১২ লাখ বিদেশির সমাগম হবে কাতার বিশ্বকাপে। হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ। ২৪ দলের বিদায়ে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে দোহা এখন প্রায় আগের চেহারাই। এখন বিশ্বকাপের বিশেষ শোভা আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের সমর্থকরাই।
Leave a Reply